সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা অনুযায়ী, নিয়মিত সাইকেল চালালে ডিমেনশিয়া এবং আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য গবেষণাবিষয়ক সংস্থা 'ইউকে বায়োব্যাংক' দ্বারা পরিচালিত এই গবেষণাটি 'জেএএমএ নেটওয়ার্ক ওপেন' সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা পরিবহনের জন্য প্রাইভেট কার, বাস বা ট্রেনের পরিবর্তে সাইকেল ব্যবহার করেন, তাদের ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি ১৯% এবং আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি ২২% পর্যন্ত কমে যায়। এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল দৈনন্দিন শারীরিক কার্যকলাপ এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জটিলতার মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে বের করা।
ডিমেনশিয়া হলো মস্তিষ্কের এমন একটি অবস্থা যেখানে ব্যক্তির চিন্তাশক্তি, স্মৃতিশক্তি ও স্বাভাবিক কাজ করার ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে আসে। আলঝেইমার রোগ ডিমেনশিয়ার একটি সাধারণ কারণ। যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা (NHS) অনুসারে, মস্তিষ্কের কোষের ভিতরে ও আশেপাশে অস্বাভাবিক প্রোটিন জমা হওয়ার কারণে আলঝেইমার রোগ হতে পারে।
এই গবেষণাটি ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪ লক্ষ ৮০ হাজার মানুষের ওপর পরিচালিত হয়েছিল, যাদের গড় বয়স ছিল সাড়ে ৫৬ বছর। অংশগ্রহণকারীদের যাতায়াতের চারটি ভিন্ন বিকল্পের মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে বলা হয়: ১. সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় যাতায়াত (যেমন: বাস বা ট্রেনে)। ২. হেঁটে যাতায়াত। ৩. হাঁটা বা সক্রিয় শারীরিক পরিশ্রম লাগে না এমন মাধ্যম ব্যবহার করে যাতায়াত। ৪. সাইকেল চালিয়ে যাতায়াত বা অন্যান্য মাধ্যম ব্যবহার করা।
তেরো বছরের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৮,৮৪৫ জনের ডিমেনশিয়া এবং ৩,৯৫৬ জনের আলঝেইমার রোগ ধরা পড়েছে। গবেষণায় আরও দেখা যায়, যারা যাতায়াতের ক্ষেত্রে হাঁটার ওপর নির্ভরশীল ছিলেন, তাদের ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি ৬% কম ছিল।
সাইকেল চালানোর সঙ্গে মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস নামক অংশের আয়তনের বৃদ্ধির সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে। মস্তিষ্কের এই অংশটি স্মৃতি সংরক্ষণ এবং শেখার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
নিউইয়র্কের স্টোনি ব্রুক ইউনিভার্সিটির স্নায়ুবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জো ভারগেসের মতে, দশকব্যাপী গবেষণা এটাই প্রমাণ করে যে, শারীরিক ব্যায়াম মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তিনি বলেন, সাইকেল চালানো হার্টকে সুস্থ রাখে এবং মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন ও হজমের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, যা ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, তিনি এও পরামর্শ দিয়েছেন যে, সাইকেল চালানো শুরুর আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত।