খাগড়াছড়িতে সম্প্রতি সেনা বহরের উপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি)। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে পিসিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন কায়েস এবং সাধারণ সম্পাদক মো: হাবীব আজম এ প্রতিবাদ জানান। একই সঙ্গে হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ-এর ছত্রছায়ায় 'জুম্ম ছাত্র-জনতার মহাসমাবেশ' থেকে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর গাড়ির উপর হামলা কোনোভাবেই একটি সুষ্ঠু আন্দোলনের পরিচয় বহন করে না।
পিসিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ধর্ষণবিরোধী মহাসমাবেশের নামে সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দেওয়া এবং লাঠি ও পাথর নিক্ষেপ করে হামলা চালানো সরল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ নয়। এটিকে সুপরিকল্পিত উস্কানি ও ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছে পিসিসিপি।
নেতৃবৃন্দ বলেন, একটি সত্যিকার ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত অপরাধীদের বিচারের দাবি তোলা এবং সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করা। অথচ এখানে সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা ও হামলা চালানো হচ্ছে, যা রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার অপচেষ্টা মাত্র।
বিবৃতিতে পিসিসিপি জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে উপজাতি সন্ত্রাসী মহল সেনাবাহিনীকে নিয়ে ষড়যন্ত্র এবং পাহাড়কে উত্তপ্ত করার পরিকল্পনা করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে তাদের অপপ্রচার যেন থামছেই না। তাদের নিত্যদিনের স্লোগান হয়ে দাঁড়িয়েছে "পাহাড় থেকে সেনা হটাও"। অথচ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাহাড়কে শান্ত রাখার জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
বিবৃতিতে পিসিসিপি নেতৃবৃন্দ সম্প্রতি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার সিঙ্গিনালা এলাকায় অষ্টম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনার উল্লেখ করেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শয়ন শীল (১৯) ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেনাবাহিনীর সহায়তায় প্রধান আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এবং অন্যান্য জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার পরও পাহাড়ি সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ-এর সরাসরি ইন্ধনে তাদের ছাত্র সংগঠন বৃহত্তর পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ-এর সন্ত্রাসীরা 'জুম্ম ছাত্র-জনতার' ব্যানারে ইচ্ছাকৃতভাবে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। “পাহাড় থেকে সেনা হটাও” স্লোগান তুলে তারা ধর্ষণের ঘটনার মতো মানবিক ইস্যুকেও রাজনৈতিক ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কাজে লাগাতে চাইছে। এতে স্পষ্ট বোঝা যায়—উপজাতি সন্ত্রাসীরা যেকোনো অঘটন ঘটলেই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে।
পিসিসিপি বিবৃতিতে আরো বলেছে, সেনাবাহিনী বরাবরই পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় কাজ করছে। জটিল ভৌগোলিক পরিবেশে তারা পাহাড়ি-বাঙালি নির্বিশেষে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দিনরাত পরিশ্রম করছে।
বিবৃতিতে পিসিসিপি নেতৃবৃন্দ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো পরিকল্পিতভাবে নারীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে এবং বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনী বিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা করছে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—যে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ জানানো উচিত ছিল প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে, সেটিকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে সেনাবাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে ভুক্তভোগী পরিবারের ন্যায়বিচারের দাবি আড়াল হয়ে যাচ্ছে এবং অপরাধীদের রক্ষা করার চেষ্টা স্পষ্ট হয়ে ওঠছে।
পিসিসিপি দৃঢ়ভাবে জানিয়েছে, “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার।” তাদের ভূমিকা শুধু পার্বত্য অঞ্চলে নয়, পুরো দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অপরিসীম। তাই যেকোনো ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার প্রতিহত করতে এবং অপরাধীদের রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় বন্ধ করার দাবি জানায় তারা।
বিবৃতির শেষে পিসিসিপি নেতৃবৃন্দ জোর দাবি জানান যে, সেনাবাহিনীর গাড়ি লক্ষ্য করে হামলাকারী ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা হোক এবং ইউপিডিএফ-এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে কঠোরভাবে তাদের দমন করার জন্য সরকারি নির্দেশনা দেওয়া হোক। অন্যথায়, দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতাকে নিয়ে পিসিসিপি তিন পার্বত্য জেলাকে অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।