স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সরকারি চিকিৎসকদের জন্য নতুন আটটি কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে। এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো চিকিৎসকদের পেশাগত ভাবমূর্তি রক্ষা করা এবং হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানিগুলোর অযাচিত প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করা। এর মাধ্যমে রোগীদের জন্য নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এ বি এম আবু হানিফ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নির্দেশনাগুলো প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, সরকারি চিকিৎসকদের প্রতি জনআস্থা বৃদ্ধি, সেবার মান উন্নত করা এবং হাসপাতালগুলোতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এই নির্দেশনাগুলো কঠোরভাবে মানা অপরিহার্য।
নির্দেশনাগুলো নিম্নরূপ:
১. কোনো চিকিৎসক ব্যক্তিগত ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিক, বা ওষুধ কোম্পানির নামাঙ্কিত প্যাড ব্যবহার করে প্রেসক্রিপশন বা পরীক্ষার পরামর্শ দিতে পারবেন না।
২. সরকারি হাসপাতালে যেসব পরীক্ষা ও ওষুধ সহজলভ্য, সেগুলো বাইরে থেকে করাতে বা কিনতে রোগীকে উৎসাহিত করা যাবে না।
৩. সরকার কর্তৃক অনুমোদিত বা সরবরাহকৃত সিল ছাড়া অন্য কোনো বেসরকারি সিল ব্যবহার করা যাবে না। তবে, বিজ্ঞাপনবিহীন জেনেরিক নামের সিল ব্যবহার করা যাবে।
৪. ওষুধ কোম্পানির সরবরাহ করা ওষুধের তালিকা সরকারি হাসপাতালের টেবিলে রাখা যাবে না।
৫. কোনো কোম্পানির প্রতিনিধি রোগীর প্রেসক্রিপশন বা ব্যক্তিগত তথ্যের ছবি তুলতে বা সংগ্রহ করতে পারবেন না।
৬. কোম্পানির প্রতিনিধিরা চিকিৎসকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন সপ্তাহে কেবল দুই দিন — সোমবার ও বৃহস্পতিবার, দুপুর ১২টা থেকে ২:৩০ মিনিট পর্যন্ত।
৭. নির্ধারিত সময়ের বাইরে কোনো প্রতিনিধিকে হাসপাতালে অবস্থান করতে দেখা গেলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৮. সাক্ষাতের সময় কোম্পানি কর্তৃক প্রদত্ত আইডি কার্ড অবশ্যই দৃশ্যমান স্থানে পরিধান করতে হবে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মনে করে, এই নির্দেশনাগুলো সঠিকভাবে কার্যকর হলে সরকারি চিকিৎসকদের পেশাগত সম্মান বৃদ্ধি পাবে এবং রোগীরা তাদের প্রতি পুনরায় আস্থা স্থাপন করতে পারবে। সম্প্রতি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা ওষুধ কোম্পানিগুলোর চাপের কারণে অনেক রোগী অতিরিক্ত আর্থিক বোঝায় পড়ছিলেন, যা নিয়ন্ত্রণ করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই নির্দেশনাগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে তদারকি বাড়ানো, নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং রোগীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি। অধিদপ্তর জানিয়েছে, নির্দেশনা লঙ্ঘিত হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।