ন্যাটো রাশিয়াকে তার পূর্ব সীমান্ত বরাবর আকাশসীমা লঙ্ঘনের ‘ক্রমবর্ধমান’ ঘটনা বন্ধ করার জন্য সতর্ক করেছে। গত সপ্তাহে এস্তোনিয়ার আকাশসীমায় একটি রাশিয়ান জেট অনুপ্রবেশের পর ন্যাটোর ৩২টি সদস্য রাষ্ট্র এক জরুরি বৈঠকে বসে এবং এই সতর্কতা জারি করে।
এক যৌথ বিবৃতিতে ন্যাটো বলেছে, এই কর্মকাণ্ডের জন্য রাশিয়া সম্পূর্ণ দায়ী। তারা এটিকে ‘উসকানিমূলক, ভুল হিসাবের ঝুঁকি তৈরি করে এবং প্রাণহানির সম্ভাবনা সৃষ্টি করে’ বলে উল্লেখ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, এই ধরনের কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
ন্যাটো আরও জানিয়েছে, ‘রাশিয়ার কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়—ন্যাটো এবং তার মিত্ররা আন্তর্জাতিক আইন মেনে নিজেদের রক্ষা করতে এবং সব ধরনের হুমকি প্রতিরোধ করতে প্রয়োজনীয় সব সামরিক ও অসামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’ জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা ‘পছন্দমতো উপায়, সময় ও ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকবে’ এবং তাদের সমষ্টিগত প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতি ‘অটল’ থাকবে।
রুশ যুদ্ধবিমান শুক্রবার প্রায় ১২ মিনিট এস্তোনিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘন করে, যার ফলে দেশটি ন্যাটোর প্রতিষ্ঠাতা চুক্তির অনুচ্ছেদ ৪ অনুযায়ী জরুরি পরামর্শ সভার আহ্বান জানায়। এর প্রতিক্রিয়ায় ন্যাটো তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিমান উড়িয়ে দেয়। এর মাত্র এক সপ্তাহ আগেই পোল্যান্ডের আকাশে একটি রুশ ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছিল, যার জেরে ওয়ারশ একই ধরনের বৈঠকের দাবি করেছিল।
ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে বলেন, রুশ বিমান আকাশসীমা লঙ্ঘন করলে সেগুলোতে গুলি চালানো হবে কি না, তা নির্ভর করবে ‘বিমানগুলো থেকে আসা হুমকির বিষয়ে পাওয়া গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে’। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘রাশিয়ার প্রতি আমাদের বার্তা স্পষ্ট—আমরা মিত্রদের প্রতিটি ইঞ্চি ভূখণ্ড রক্ষা করব।’ তিনি আরও জানান, এস্তোনিয়ায় ন্যাটো বাহিনী দ্রুত বিমানটিকে আটক করে ও বহিষ্কার করে, কারণ তাৎক্ষণিক কোনো হুমকি শনাক্ত করা যায়নি।
পোল্যান্ডে ড্রোন অনুপ্রবেশের ঘটনার পর ন্যাটো ঘোষণা করেছে, তারা পূর্ব সীমান্তে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করবে, যাতে মস্কোর হুমকির মোকাবিলা করা যায়। পোল্যান্ড ও এস্তোনিয়া ছাড়াও পূর্ব সীমান্তের আরও কয়েকটি দেশ সম্প্রতি আকাশসীমা লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে।
ন্যাটোর এই কঠোর অবস্থান ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ ন্যাটোর সীমান্ত পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়িয়েছে। তবে ন্যাটো দেশগুলো তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইউক্রেনকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি থেকে তারা রাশিয়ার এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডে ভীত হবে না।
ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৪ অনুযায়ী, কোনো সদস্য রাষ্ট্র যদি মনে করে তার ‘ভৌগোলিক অখণ্ডতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা বা নিরাপত্তা’ হুমকির মুখে পড়েছে, তবে জরুরি আলোচনার আহ্বান জানাতে পারে। ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ হামলার পর থেকে এই বৈঠকটি ছিল তৃতীয়বার অনুচ্ছেদ ৪ প্রয়োগ। ন্যাটোর ৭৬ বছরের ইতিহাসে এটি নবমবারের মতো ঘটেছে।
ন্যাটোর সমষ্টিগত নিরাপত্তা নির্ভর করে এর অনুচ্ছেদ ৫ নীতির ওপর, যা অনুযায়ী কোনো এক সদস্য আক্রান্ত হলে পুরো জোট তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসবে। এই অনুচ্ছেদটি ন্যাটোর ইতিহাসে কেবল একবার কার্যকর হয়েছে—২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর।