বেকার মাত্রই বোঝে হতাশার যন্ত্রণা। একটি চাকরি এনে দেয় ব্যক্তিগত সুখ, মানসিক স্বস্তি, পারিবারিক স্বাচ্ছন্দ্য কিংবা অনেক টানাপোড়েনের জটিলতার শেষ সমাধান। পকেটে থাকা মুঠোফোনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে স্ক্রল করলেই যেমন আসে চাকরির নিয়োগ বা বিজ্ঞাপনের খবর তেমনি নিয়োগ পরীক্ষার সমাধান কিংবা সাজেশন। আর এই সমাধানের রাস্তায় নানান প্রলোভন নিয়ে আসা ব্যক্তিগুলো সাময়িক মুশকিল আসান বলে মনে হলেও শেষমেশ তারাও হয়ে ওঠে হতাশার জীবনের আরেক খলনায়কের চরিত্র।
এরকম এক খলনায়ক চক্রের মূলহোতাকে গ্রেফতার করেছে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি)। বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) এর বিভিন্ন নন-ক্যাডার চাকরি প্রার্থীদের চাকরির পরীক্ষায় ৯০% কমন সাজেশন দেয়ার নাম করে সাধারণ চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিত সংঘবদ্ধ চক্রটি। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম মতিউর রহমান (৩২), পিতা-মোঃ নাসির উদ্দিন, মাতা-রেহেনা বেগম, সাং-মন্ডলবাড়ি নোয়ার পাড়া, কাজলা, থানা- ইসলামপুর, জেলা- জামালপুর। জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানা এলাকা হতে উক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রতারক চক্রটি পিএসসির বিভিন্ন পদে (নন-ক্যাডার) নিয়োগ পরীক্ষার আগে নিশ্চিত সাজেশনের নাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে
বিশেষ করে ফেসবুক পেজে "ATEO এর জন্য সিক্রেট শীট কেউ হাতছাড়া করবেন না এই সুযোগ। শেষ মূহুর্তের চূড়ান্ত Secret সাজেশন শীট মাত্র ৫৫০ টি MCQ সাথে উত্তর। হুবহু কমন পাবেন ৮০-৯০% ক্যাশ অন ডেলিভারি ৩৯০ টাকা অগ্রীম ৯০ টাকা, সুন্দরবন কুরিয়ারে অগ্রীম ফুল পেমেন্ট আর পিডিএফ নিতে ২০০ টাকা এবং পেমেন্টের ১ মিনিটের মধ্যেই পিডিএফ পাবেন মেসেঞ্জার, হোয়াটস অ্যাপ, ইমেইল এ সেভ করা হবে। বিকাশ পার্সোনাল/নগদ/রকেট নাম্বার এরকম নানা চটকদার শিরোনামে পোষ্ট করতো। এরপর তাদের সাথে যোগাযোগ হলে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) এর বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সাধারণ চাকরিপ্রার্থীদের নিকট হতে অর্থ হাতিয়ে নিত। যার ফলশ্রুতিতে, একদিকে যেমন সাধারণ চাকরি প্রত্যাশীগণ প্রতারিত হচ্ছিল, অন্যদিকে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (BPSC) এর সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছিল।
বিষয়টি নজরে আসলে পিএসসি এর সহকারী পক্ষ হতে গত ০১/০৯/২০২৫ খ্রি. তারিখ সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি), সিআইডিতে
অভিযোগ করলে বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে কাজ শুরু করে। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে প্রতারক চক্রটির মূলহোতা মতিউর রহমান (৩২) কে সনাক্তপূর্বক সিআইডি জামালপুর ও জেলা পুলিশের সহায়তায় গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকালীন প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ০২ টি মোবাইল ও ০১টি ল্যাপটপ আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) এর পক্ষ হতে শেরে বাংলা নগর থানায় (ডিএমপি) মামলা নং- ০১, তারিখ- ০১/০৯/২০২৫ খ্রি., ধারা- পেনাল কোড- ১৮৬০ এর ৪০৬/৪২০/৫০০ রুজু করা হয়েছে।
চক্রের অন্যান্য আসামী সনাক্ত ও গ্রেফতারে সিআইডির অভিযান চলমান আছে। গ্রেফতারকৃতকে বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন ও পরবর্তী আইনগত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, চক্রের অপরাপর সদস্যদের সনাক্ত ও গ্রেফতার করার স্বার্থে
সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।