দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ফিলিপাইনে গভীর রাতে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ জনে। উদ্ধার অভিযান চলমান রয়েছে এবং বহু এলাকায় বিদ্যুৎ ও পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে সরকারি সংস্থাগুলো উদ্ধার তৎপরতার পাশাপাশি বিদ্যুৎ-পানি সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কাজ শুরু করেছে। বুধবার (১ অক্টোবর) বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত প্রায় ১০টার দিকে সেবু প্রদেশের উপকূলে ৬.৯ মাত্রার এই ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। ভূকম্পন কেন্দ্রের নিকটবর্তী বোগো শহরের হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা রাফি আলেহান্দ্রো।
সিভিল ডিফেন্স দপ্তরের আঞ্চলিক তথ্য কর্মকর্তা জেন আবাপো নিশ্চিত করেন, প্রাথমিকভাবে নিহতের সংখ্যা ৬৯ জন হলেও তা যাচাই-বাছাই চলছে। এই ঘটনায় দেড় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট ফার্ডিনান্ড মার্কোস জুনিয়র ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, মন্ত্রিসভার সদস্যরা সরাসরি ত্রাণ কার্যক্রম তদারকি করছেন। নিহতদের পরিবারের প্রতি শোকও জানিয়েছেন তিনি।
রয়টার্স জানিয়েছে, ফিলিপাইনের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র সেবুতে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের বসবাস। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মাঝেও দেশটির দ্বিতীয় ব্যস্ততম ম্যাকতান-সেবু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সচল রয়েছে।
ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সান রেমিজিও। এই শহরে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের সহকারী মেয়র আলফি রেইনেস জানিয়েছেন, বৃষ্টির কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং পানির সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তিনি খাদ্য, পানি এবং ভারী যন্ত্রপাতির জরুরি সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন।
এদিকে পিলার শহরের বাসিন্দা আর্চেল কোরাজা বলেন, ভূমিকম্প আঘাত হানার সময় পরিবারের সদস্যরা ঘুমিয়ে ছিলেন। প্রচণ্ড কম্পন শুরু হলে তিনি দ্রুত পরিবারকে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। কোরাজা আরও জানান, ভূমিকম্পের পরই তিনি সাগরের পানি তীর থেকে সরে যেতে দেখেন।
স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে, মানুষ ঘর ছেড়ে দৌড়ে বেরিয়ে আসছে, ভবন ধসে পড়ছে এবং শতবর্ষী একটি গির্জাও ভেঙে গেছে। রেইনেস জানান, নিহতদের কয়েকজন সান রেমিজিওর একটি ক্রীড়া কমপ্লেক্সে বাস্কেটবল খেলছিলেন। ভূমিকম্পে ওই ভবনটি আংশিকভাবে ধসে পড়েছিল।
ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ এই কম্পনের গভীরতা ছিল প্রায় ১০ কিলোমিটার। এর পরে একাধিক আফটারশক রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালীটির মাত্রা ছিল ৬। তবে কোনো সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়নি।
উল্লেখ্য, ফিলিপাইন প্রশান্ত মহাসাগরের 'রিং অব ফায়ার'-এ অবস্থিত হওয়ায় দেশটিতে প্রায়শই ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটে থাকে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশটিতে দুটি বড় ভূমিকম্প হলেও সেগুলোতে কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। এর আগে ২০২৩ সালে ৬.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে অন্তত আটজনের মৃত্যু হয়েছিল।