সম্প্রতি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগাল। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় এই দেশগুলো প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবে এই স্বীকৃতি দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে ফ্রান্সসহ আরও কিছু দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে পারে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই স্বীকৃতিকে 'হাস্যকর' আখ্যা দিয়েছেন এবং বলেছেন এটি 'সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করবে'। তিনি এর আগে বলেছিলেন, 'ফিলিস্তিন নামে কোনো রাষ্ট্র হবে না।'
আল-জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিশ্লেষকরা এই পদক্ষেপকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি অবমাননা, হত্যাকাণ্ড এবং তাদের ঘরছাড়া করার বিরুদ্ধে একটি ক্ষুদ্র ও প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। তবে এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকও রয়েছে। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আবু রাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্ররা সাধারণত একটি সমঝোতাপূর্ণ চুক্তির পরই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবত, কিন্তু তার আগেই এই দেশগুলো প্রচলিত ধারা ভেঙে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর ফলে ইসরায়েল আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে, যা তাৎপর্যপূর্ণ।
তবে এই স্বীকৃতি ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার অবসান ঘটাবে কিনা বা কোনো বাস্তব পরিবর্তন আনবে কিনা, তা নিয়ে বিশ্লেষকরা সন্দিহান। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৬৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৬৬ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছেন। অধিকৃত পশ্চিম তীরেও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় ১ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
স্বাধীন গবেষক ক্রিস ওসিক মনে করেন, এই স্বীকৃতির পাশাপাশি যদি ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা, অস্ত্র অবরোধ এবং অধিকৃত ফিলিস্তিনে 'নো ফ্লাই জোন' বাস্তবায়নের মতো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে আশাবাদী হওয়ার কিছু নেই। দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের অধ্যাপক মোহাম্মদ এলমাসরি এই স্বীকৃতিকে 'লোকদেখানো' পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছেন, যা আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে নেওয়া হয়েছে।
তবে এই স্বীকৃতির ফলে ফিলিস্তিন সরকার স্বীকৃতিদাতা দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি ও রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করতে পারবে। যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যে হুসাম জোমলটকে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিলিস্তিনের অবস্থান
ইতিমধ্যে বিশ্বের বড় একটি অংশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, কিছু ইউরোপীয় ও বাল্টিক দেশ এবং দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মতো কয়েকটি দেশ এখনো স্বীকৃতি দেয়নি। অধিকাংশ দেশের স্বীকৃতি সত্ত্বেও ফিলিস্তিন এখনো জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য হতে পারেনি। বর্তমানে তারা 'পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র' হিসেবে রয়েছে। জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য হতে হলে নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশ এবং সাধারণ অধিবেশনে ভোট পেতে হয়, যা যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো ক্ষমতার কারণে কঠিন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই স্বীকৃতি মূলত পশ্চিমা নেতাদের 'মুখ বাঁচানোর' একটি কৌশল। একদিকে ইসরায়েলপন্থী গোষ্ঠীগুলোর চাপ, অন্যদিকে জাতিগত হত্যা বন্ধে জনগণের ক্রমবর্ধমান দাবির মুখে তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এটি ছিল অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ একটি পদক্ষেপ, যা জনগণকে সন্তুষ্ট রাখতে সাহায্য করবে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এই পদক্ষেপকে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পথে একটি অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কারের প্রতিশ্রুতির ওপর নির্ভরশীল।