কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের ঝাউগাছ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে তরুণ সাংবাদিক আমিন উল্লাহর (২৩) লাশ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। আমিন উল্লাহ ঢাকা থেকে প্রকাশিত 'দৈনিক আমার প্রাণের বাংলাদেশ' পত্রিকার উখিয়া প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন।
তবে ঘটনার পর সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে আমিন উল্লাহকে আত্মহত্যার জন্য উখিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফ হোসাইনকে দায়ী করতে দেখা গেছে। প্রায় সাত মিনিটের ওই ভিডিওতে আমিন উল্লাহ অভিযোগ করেন, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। তিনি জানান, গত ২৫ জুলাই গভীর রাতে পুলিশ তার বাড়িতে যায় এবং কয়েক দিন আগে এলাকায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের মিছিলে যোগ দেওয়ার অভিযোগে তার ছোট ভাইকে ধরে নিয়ে যায়।
ভিডিওতে আমিন উল্লাহ বলেন, 'পুলিশ আমাকে কেন খুঁজছে জানি না। ওসি আরিফ স্যারের উদ্দেশে বলছি, কোন অপরাধে আমার ছোট ভাইকে ধরেছেন? মামলা করার আগে তদন্ত করা উচিত ছিল। কয়েক দিন ধরে আমি বাসায় থাকতে পারছি না। সাংবাদিক হিসেবে নিউজ করা—এটা কি আমার অপরাধ?'
একপর্যায়ে তিনি বলেন, 'অত্যাচার বন্ধ না হলে আমি আত্মহত্যার পথ বেছে নেব। আমি যদি আত্মহত্যা করি, এর দায়ভার থাকবে উখিয়া থানা–পুলিশের।' ভিডিওতে তিনি প্রধান উপদেষ্টা, সেনাবাহিনী ও র্যাবের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তবে ভিডিওটি কখন ধারণ করা হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বর্তমানে রামু থানায় বদলি হয়ে যাওয়া ওসি মো. আরিফ হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, 'ভিডিওটি আমি ফেসবুকে দেখেছি। সাংবাদিক আমিনকে আমি চিনি না, কখনো তার সঙ্গে কথা হয়নি। ভিডিওটি পরিকল্পিতভাবে করা হতে পারে।' তিনি দাবি করেন, গত ২৫ জুলাই বালুখালীতে ছাত্রলীগের মিছিল ও ইয়াবা লুটের ঘটনায় পুলিশের অভিযান হলেও আমিন উল্লাহকে ধরতে পুলিশ তার বাড়িতে যায়নি।
নিহত আমিন উল্লাহর মা আয়েশা খাতুন অভিযোগ করেন, তার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি এর বিচার দাবি করেন।
স্থানীয় বন্ধুদের মতে, দেড় বছর আগে একটি এনজিওতে কাজ করার পর আমিন সাংবাদিকতা শুরু করেন। তাদের ধারণা, আত্মহত্যা বা হত্যার পেছনে প্রেমঘটিত সম্পর্ক অথবা ইয়াবার চালান লুটের ঘটনার জের থাকতে পারে।
উখিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমিন উল্লাহর মৃত্যু নিয়ে এলাকায় নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, তবে প্রকৃত কারণ এখনো স্পষ্ট নয়।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মো. ইলিয়াস খান জানান, সৈকতের ঝাউগাছ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় লাশ উদ্ধার করা হয়েছে এবং শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তার কাছে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী একটি বাসের টিকিট পাওয়া গেছে, যাতে বুধবার রাত ৯টা ২০ মিনিটের সময় লেখা ছিল। প্রাথমিকভাবে এটিকে আত্মহত্যা বলে মনে হলেও, প্রেমঘটিত কোনো বিষয় বা হত্যার অভিযোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।