ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার এক অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নে দেখা গেছে যে গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক ফিলিস্তিনিদের মধ্যে মাত্র চার ভাগের এক ভাগ যোদ্ধা। ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সাময়িকী প্লাস নাইন সেভেন টু, হিব্রু ভাষার সাময়িকী লোকাল কল, এবং ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান-এর একটি যৌথ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে গত বৃহস্পতিবার এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
এই অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আটককৃতদের মধ্যে অনেকেই ইসরায়েলের ২০০২ সালের ‘অবৈধ যোদ্ধা আইন’-এর অধীনে বন্দী হয়েছেন। এই আইন অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তিকে হামাসের মতো কোনো ‘অবৈধ’ সংগঠনের সদস্য বলে সন্দেহ করা হয়, তবে সুনির্দিষ্ট কোনো অপরাধের প্রমাণ না থাকলেও তাকে আটক করা যেতে পারে।
অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানা গেছে, আটককৃতদের মধ্যে আলঝেইমারে আক্রান্ত ৮২ বছর বয়সী এক নারীও ছিলেন, যিনি ছয় সপ্তাহ কারাগারে কাটিয়েছেন। এছাড়া একজন মা-কেও আটক করা হয়েছিল, যার ছোট ছোট বাচ্চারা পরে রাস্তায় ভিক্ষা করতে বাধ্য হয়।
ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী, ৭ অক্টোবরের হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রায় ৩০০ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলে আটক আছেন। তাদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে, কিন্তু এখনো বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।
অনুসন্ধানকারীরা ইসরায়েলের গোপন সামরিক তথ্যভান্ডার পর্যালোচনা করেছেন, যা ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তাদের মতে হামাস ও প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) যোদ্ধাদের সবচেয়ে নির্ভুল তালিকা। এই তথ্যভান্ডারে ৪৭ হাজারেরও বেশি ব্যক্তির নাম রয়েছে, যাদেরকে গোয়েন্দারা সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে মনে করেন।
তবে গত মে মাস পর্যন্ত এই ৪৭ হাজার ব্যক্তির মধ্যে মাত্র ১,৪৫০ জনকে ‘গ্রেপ্তার’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এর অর্থ, ঐ সময়ে ইসরায়েলের হাতে আটক প্রায় ৬ হাজার ফিলিস্তিনির মধ্যে তিন-চতুর্থাংশকে হামাস বা পিআইজে সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। ইসরায়েলি কারা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুসারে, অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের সংখ্যা ‘অবৈধ যোদ্ধা’ হিসেবে আটক মোট বন্দীর ২% এরও কম।
ইসরায়েলি হেফাজতে থাকার সময় ফিলিস্তিনি বন্দীদের নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গত জুলাইয়ে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্দীদের ওপর কুকুর লেলিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
এছাড়াও ফাঁস হওয়া জবানবন্দি এবং ভিডিও প্রমাণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ইসরায়েলি নিরাপত্তারক্ষীরা ফিলিস্তিনি বন্দীদের ধর্ষণ করেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৭৫ জন ফিলিস্তিনি বন্দী ইসরায়েলি হেফাজতে মারা গেছেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে বন্দী বিনিময় প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১৮৩ জন ফিলিস্তিনি মুক্তি পান। প্যালেস্টিনিয়ান প্রিজনারস সোসাইটি জানিয়েছে, মুক্তিপ্রাপ্ত অনেক বন্দীর শরীরে নির্যাতনের সুস্পষ্ট চিহ্ন দেখা গেছে।
গাজায় চলমান যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বারবার নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের ভুলভাবে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করার অভিযোগ উঠেছে। মার্চ মাসে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল সরকার যে ৯ হাজার যোদ্ধাকে হত্যার দাবি করেছিল, তাদের অধিকাংশই ছিল সাধারণ নাগরিক।