গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ১৩টি নৌযানকে আটক করেছে ইসরায়েলের নৌবাহিনী, যারা যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার ফিলিস্তিনিদের জন্য খাদ্য ও ওষুধ বহন করছিল। তবে বহরের বাকি ৩০টি নৌযান গাজার উদ্দেশ্যে তাদের যাত্রা চালিয়ে যাচ্ছে।
বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম 'এক্স'-এ (পূর্বে টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে। বার্তায় বলা হয়, "হামাস-সুমুদ ফ্লোটিলার বেশ কয়েকটি নৌযান থামিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সেগুলোর যাত্রীদের নিরাপদে ইসরায়েলের বন্দরে নিয়ে আসা হয়েছে।"
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ এই ফ্লোটিলার নৌবহরে ছিলেন এবং তাকেসহ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক্সবার্তায় এ বিষয়ে বলা হয়েছে, "গ্রেটা থুনবার্গ এবং তার বন্ধুরা নিরাপদ ও শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন।"
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা হলো চারটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা—ফ্রিডম ফ্লোটিলা ফাউন্ডেশন, গ্লোবাল মুভমেন্ট টু গাজা, মাগরেব সুমুদ ফ্লোটিলা, এবং সুমুদ নুসানতারা-এর একটি ঐক্যমঞ্চ। গত ৩১ আগস্ট স্পেন বন্দর থেকে খাদ্য ও ওষুধে পূর্ণ মোট ৪৩টি নৌযানের বহর নিয়ে তারা গাজার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। এই জাহাজগুলোতে ৪৪টি দেশের ৫০০ জন নাগরিক স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে রয়েছেন, যাদের মধ্যে আছেন পার্লামেন্টারিয়ান, আইনজীবী, রাজনৈতিক আন্দোলনকর্মী ও সাধারণ সেচ্ছাসেবীরা।
বুধবার ভূমধ্যসাগরের গাজা উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার নৌবহর। সেদিন সন্ধ্যায় গাজা উপকূল থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দূরে থাকা অবস্থায় ইসরায়েলি নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ নৌবহরের চারপাশ ঘিরে ফেলে এবং ১৩টি নৌযান আটক করে। আটক হওয়া নৌযানগুলোর মধ্যে তিনটি হলো: স্পেক্টার, অ্যালমা, এবং সাইরাস।
আটক হওয়া নৌযানগুলোর যাত্রীরা টেলিগ্রামে ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য খাদ্য ও ওষুধ নিয়ে যাওয়ার একটি অহিংস উদ্যোগে ইসরায়েলের এই বাধা প্রদানের নিন্দা জানিয়েছেন। তারা ইসরায়েলি নৌবাহিনীর দ্বারা অপহরণের শিকার হওয়ারও অভিযোগ করেছেন এবং অনেকে নিজের পাসপোর্টসহ ছবি-ভিডিও পোস্ট করেছেন।
বুধবার রাতে ফ্লোটিলার নৌযান আটকের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস। তিনি এক্স-এ দেওয়া বার্তায় বলেন, "আজ রাতে যা ঘটল তা খুবই উদ্বেগজনক। এটি ছিল একটি শান্তিপূর্ণ মিশন, যার মূল লক্ষ্য ছিল গাজায় চলমান ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের শিকারদের পাশে দাঁড়ানো।"
ইসরায়েলি নৌবাহিনী ১৩টি নৌযান আটক করলেও, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার বাকি ৩০টি নৌযান গাজার উপকূলের দিকে তাদের যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। বুধবার ১৩টি জাহাজ আটকের পর এক বিবৃতিতে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা জানায়, "ইসরায়েলের এসব অবৈধ পদক্ষেপ আমাদের আটকে রাখতে পারবে না। আমরা আমাদের মিশন চালিয়ে যাব এবং গাজায় একটি মানবিক করিডর খুলব।"
উল্লেখ্য, গত ১৮ বছর ধরে ইসরায়েল গাজার সমুদ্র উপকূল অবরোধ করে রেখেছে। গাজায় কোনো সমুদ্রবন্দর না থাকায় এবং ইসরায়েলের অবরোধের কারণে কোনো আন্তর্জাতিক জাহাজ বা নৌযান গাজা উপকূলের কাছাকাছি যেতে পারে না। ফ্লোটিলার নৌবহর সেখানে পৌঁছাতে পারলে তা হবে ১৮ বছর পর গাজার উপকূলে কোনো আন্তর্জাতিক নৌবহরের প্রথম নোঙ্গর।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যে জানিয়েছে, স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৩টায় ৩০টি নৌযান গাজা থেকে ৪৬ নটিক্যাল মাইল (বা ৮৫.১৯ কিলোমিটার) দূরে ছিল।
সূত্র: রয়টার্স, আলজাজিরা