📅 ২ অক্টোবর, ২০২৫ | 🕒 প্রকাশকাল: ১ মাস আগে | অনলাইন ডেস্ক
ইসরায়েলি বাহিনী গাজামুখী ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’-র ১৩টি নৌযান আটক করেছে। যদিও প্রায় দুই ডজন নৌযান এখনো গাজার দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং এর মধ্যে একটি জাহাজ ইতোমধ্যে গাজার আঞ্চলিক জলসীমায় প্রবেশ করেছে। বহরের যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে কর্তৃপক্ষ লাইভ ভিডিও সম্প্রচারের ব্যবস্থা চালু করেছে।
ইসরায়েল পূর্বে এই নৌবহরকে থামিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল, দাবি করে যে কর্মীরা 'বৈধ নৌ অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করছেন'। তবে আন্তর্জাতিক আইনানুসারে, মানবিক সহায়তা গন্তব্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করা যায় না। এই ঘটনায় বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলের আচরণের তীব্র নিন্দা শুরু হয়েছে।
গাজার উদ্দেশে যাওয়া ত্রাণবাহী এই ফ্লোটিলার নৌযানগুলোতে থাকা আইনজীবীরা ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং সামুদ্রিক আইন লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নথিভুক্ত করছেন। আল জাজিরার সাংবাদিক হাসান মাসউদ, যিনি বহরের একটি জাহাজে আছেন, নিশ্চিত করেছেন যে এই নথিগুলো জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতে পাঠানো হবে।
তিনি জানান, এখনও কয়েকটি নৌযান গাজার দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং বহরের মূল লক্ষ্য হলো— অন্তত একটি জাহাজ গাজায় পৌঁছানো, যার মাধ্যমে অবরোধ ভাঙা সম্ভব হবে। হাসান মাসউদ আরো জানান, ইতালির সিসিলি থেকে আরেকটি ফ্লোটিলা গাজার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে, যা ক্ষুধার্ত জনগণের কাছে খাদ্য, পানি ও ওষুধ পৌঁছে দিতে এবং ইসরায়েলের পূর্ণ অবরোধের বিষয়টি বিশ্ববাসীর নজরে আনতে কর্মীদের চলমান প্রচেষ্টা প্রমাণ করে।
গাজাগামী নৌবহর আটকানোর ঘটনায় তুরস্ক, স্পেন এবং ইতালি আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। প্রয়োজনে নিজেদের নাগরিকদের সহায়তায় তারা নৌযান বা ড্রোন পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছে।
- তুরস্ক: তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলের এই হামলাকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ আখ্যা দিয়ে নিরীহ মানুষের জীবন ঝুঁকিতে ফেলার নিন্দা জানিয়েছে। ইস্তাম্বুলের প্রধান প্রসিকিউটর কার্যালয় আটক ২৪ জন তুর্কি নাগরিকের ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে। তদন্তের অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে—অবৈধভাবে আটক রাখা, পরিবহনযান জব্দ করা এবং সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত করা।
- ব্রাজিল: ব্রাজিল ইসরায়েলি নৌবাহিনীর হামলার নিন্দা জানিয়েছে। বিবৃতিতে ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েল সরকারের সামরিক পদক্ষেপ মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং শান্তিপূর্ণ কর্মীদের শারীরিক নিরাপত্তা বিপন্ন করছে। আটককৃতদের নিরাপত্তার দায় এখন ইসরায়েলের। ১৫ জন ব্রাজিলীয় নাগরিক, যার মধ্যে সংসদ সদস্য লুইজিয়ানে লিন্সও আছেন, তাদের নিরাপত্তার জন্য ব্রাজিল সরকার সরাসরি ইসরায়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ব্রাজিলসহ বহু দেশ গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে বাধা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
- পাকিস্তান: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ইসরায়েলের হামলাকে ‘একটি ঘৃণ্য আক্রমণ’ বলে নিন্দা জানিয়েছেন এবং আটক ব্যক্তিদের অবিলম্বে মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন।
- নেলসন ম্যান্ডেলার পরিবার: বর্ণবাদবিরোধী কিংবদন্তি নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি ম্যানডলা ম্যান্ডেলা একটি ভিডিও বার্তায় ইসরায়েলি নৌবাহিনীর জাহাজ তাদের নৌযানের কাছে এগিয়ে আসার কথা জানিয়েছেন। তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে গাজার দিকে তাদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে নিজ নিজ সরকারকে চাপ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
- ফিলিস্তিনি নেত্রী: ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদ হানান আশরাওয়ি আন্তর্জাতিক জলসীমায় ত্রাণবাহী নৌবহরে হামলাকে ইসরায়েলের একটি ‘অপরাধমূলক জলদস্যুতা’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি কর্মীদের ‘সাহসী নারী-পুরুষ’ আখ্যা দিয়ে ইসরায়েলের গণহত্যা ও অবৈধ অবরোধকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য তাদের প্রশংসা করেন।
- কলম্বিয়া: কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো গাজাগামী ত্রাণবাহী বহরে হামলা এবং দুই কলম্বিয়ান নারী কর্মীকে আটকের ঘটনায় দেশটিতে থাকা ইসরায়েলের সবশেষ কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে নেতানিয়াহুকে নতুন করে একটি ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ’ করার জন্য অভিযুক্ত করেন এবং বোগোতায় থাকা ইসরায়েলের পুরো কূটনৈতিক প্রতিনিধিদলকে বহিষ্কার করেন। একই সঙ্গে তিনি ২০২০ সালে কার্যকর হওয়া ইসরায়েলের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তিও বাতিল করেন।
- স্পেন: স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস গাজাগামী ত্রাণবাহী নৌবহর আটকানোর ঘটনায় মাদ্রিদে ইসরায়েলের সর্বোচ্চ কূটনীতিককে তলব করেছেন। বহরে ৬৫ জন স্প্যানিশ নাগরিক ছিলেন।
- যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া: ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং আটক ব্রিটিশ নাগরিকদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে এবং সংশ্লিষ্ট সবার নিরাপত্তা ও মানবিক আচরণ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য দাবি করেছে, নৌবহরের কয়েকটি জাহাজকে নিরাপদে থামানো হয়েছে এবং যাত্রীদের একটি ইসরায়েলি বন্দরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।