গাজায় গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা (জিএসএফ) মানবিক মিশনের অংশ হিসেবে যাত্রাকালে ইসরাইলি বাহিনী ২৩ জন মালয়েশীয় স্বেচ্ছাসেবককে আটক করেছে। এই ঘটনায় মালয়েশিয়া সরকার দ্রুত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করেছে। আটককৃতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন গায়িকা হেলিজা হেলমি ও জিজি কিরানা, এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব নুরুল হিদায়াহ।
প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম এই ঘটনাকে 'মানবিক মূল্যবোধের পতন' হিসেবে অভিহিত করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যোগাযোগ শুরু করেছেন। তিনি তুরস্ক, মিশর ও সৌদি আরবের প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করেছেন এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও যোগাযোগের পরিকল্পনা করেছেন। মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী দাতুক সেরি মোহাম্মদ খালেদ নর্ডিন স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, ইসরাইলের সঙ্গে সরাসরি কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকায়, সামরিক পদক্ষেপের পরিবর্তে কূটনৈতিক পথ এবং তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে আলোচনা আটক মালয়েশীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একমাত্র কার্যকর কৌশল।
৪৫টি দেশের ৫০০ জনেরও বেশি কর্মীর অংশগ্রহণে জিএসএফ মিশনটি গাজার অবরোধ ভাঙার একটি প্রতীকী উদ্যোগ হিসেবে পরিচিত। জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থানবার্গ, হলিউড অভিনেত্রী সুসান সারান্ডন এবং নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি মান্ডলা ম্যান্ডেলার মতো আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বদের সম্পৃক্ততা এই মিশনের বৈশ্বিক গুরুত্ব বৃদ্ধি করেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ইসরাইলি নৌবাহিনী অন্তত ২১টি জাহাজের মোট ৩১৭ জন কর্মীকে আটক করেছে এবং তাদের ইউরোপে নির্বাসনের প্রস্তুতি চলছে।
কুয়ালালামপুরে মার্কিন দূতাবাসের সামনে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের একটি সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা আটককৃতদের মুক্তি ও গাজায় সহায়তা পৌঁছানোর অনুমতি দাবি জানায়। সমাবেশে একটি স্মারকলিপি হস্তান্তর করা হয়, যেখানে তিনটি মূল দাবি উত্থাপন করা হয়েছে:
১. সমস্ত জিএসএফ কর্মীর অবিলম্বে মুক্তি। ২. গাজায় সহায়তা জাহাজ প্রবেশের অনুমতি। ৩. শান্তি প্রক্রিয়াকে ইসরাইলের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা।
পেরাক, কেলান্তানসহ মালয়েশিয়ার বিভিন্ন রাজ্যে অনুরূপ সমাবেশ হয়েছে। ফিলিস্তিনি জনগণ এবং আটক কর্মীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে দেশব্যাপী মসজিদগুলোতে বিশেষ দোয়া ও কুনুত নাজিলা পাঠ করা হয়েছে। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) জুমার নামাজের পর মার্কিন দূতাবাসের সামনে আরও একটি বড় সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে।
মালয়েশিয়ার সরকার মানবিক সহায়তায় বাধা সৃষ্টিকে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করে। আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বে মালয়েশিয়া সরকার মানবিক মূল্যবোধ ও বৈশ্বিক সংহতির প্রশ্নকে সামনে এনেছে। এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মানবিক নীতি, মানবাধিকার এবং বৈশ্বিক সংহতির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক মহল ইসরাইলের এই পদক্ষেপ কীভাবে মানবিক আইন ও কূটনৈতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করে তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।