আমার বাড়িটা আর নেই! ধ্বংসস্তূপ আর নীরবতা ছাড়া কিছুই বাকি নেই।”—গাজার এক বাসিন্দা -ইউসূফ এমনই করুণ ভাষায় বর্ণনা করছিলেন তার হারিয়ে যাওয়া আবাসস্থল সম্পর্কে। গাজা শহরের ওপর ইসরায়েলের চলমান হামলা যেন এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। প্রতিদিন যেন নতুন করে ধ্বংস হচ্ছে একটি করে ঘর, মহল্লা, নিঃশেষ হচ্ছে এক একটি করে পরিবার।
ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর এই সর্বাত্মক অভিযান এখন শুধু একটি সামরিক হামলা নয়, বরং একটি মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞরা।
একটি শহরকে ধ্বংসস্তূপ ও ছাইয়ে পরিণত করেছে!
গাজার সিভিল ডিফেন্স-এর তথ্য অনুযায়ী, মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে গাজা শহরে ১,৫০০ শত এর বেশি বাড়ি-ঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। এই বাড়িগুলোর নিচে চাপা পড়ে আছে শত শত মানুষের স্বপ্ন, স্মৃতি ও জীবন।
দৃশ্যমানভাবে শহরের বড় একটি অংশ এখন পরিণত হয়েছে ধূলিকণায়। ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা এখন পরিণত হয়েছে পরিত্যক্ত ধ্বংসস্তূপে। এ যেন এক মৃত্যুপুরী।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবি থেকে দেখা যাচ্ছে, শিশুদের কান্না, মায়ের আহাজারি এবং উদ্ধারকর্মীদের হতাশ চেহারা—সবকিছু মিলিয়ে এক বিভীষিকাময় চিত্র। সেই করুন চিত্র নাড়া দিয়ে যায় গোটা বিশ্বকে।গত ২৫ আগস্ট দক্ষিণ গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল—নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্স—এর ওপর ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন, যাদের মধ্যে ছিলেন চিকিৎসক, রোগী ও গণমাধ্যমকর্মী।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর হামলা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য এবং এটি যুদ্ধাপরাধের শামিল হতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “গাজা নগরীতে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। যুদ্ধ নয় গাজায় অনাহারে মারা যায় কঙ্কালসার শিশু, কিশোর সহ শত শত মানুষ।গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে চারজন অনাহারে মারা গেছেন। ক্ষুধার কষ্টে মৃতদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধরাও রয়েছে। বহু এলাকাতে খাবার, পানি ও ওষুধের তীব্র সংকট চলছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ইসরায়েল অবরোধের মাধ্যমে মানবিক সাহায্য আটকে রাখায় এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে হামলার পর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ ইতোমধ্যে এক ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে যাচ্ছে।গাজায় নিহত: ৬২,৯৬৬ এর বেশি।
আহত: ১,৫৯,২৬৬ এর বেশি প্রতি নিয়ত বাড়ছে আহত ও মৃত্যুর সংখ্যা।অন্য দিকে ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা - ১,১৩৯ (৭ অক্টোবর হামলায়)জিম্মি: ২০০ অধিক
এছাড়া বহু মানুষ এখনো নিখোঁজ,যাদের অনেকেই হয়তো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।জীবীত আত্মীয়দের আহাজারিতে গাজার আকাশ ভারী হয়ে আছে।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, ইসরায়েলের হামলার ধরন আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এই আক্রমণ শুধু সামরিক নয়, বরং একটি জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব বিলুপ্ত করার মত কাঠামোগত এক নীতির ইঙ্গিত দেয়।”
যদিও কিছু দেশ এই সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলছে, তবে বিশ্ব নেতাদের অনেকেই নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে ইউরোপীয় ইউনিয়নসবাই একরকম উদ্বেগ জানাচ্ছে, কিন্তু কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন নজরে পড়ছে না।
"ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে গাজাবাসীর ভবিষ্যৎ একজন গাজাবাসীর কণ্ঠে পাওয়া যায় এই যুদ্ধের আসল
“আমরা আর কাঁদতেও পারি না, চোখ শুকিয়ে গেছে। শুধু আতংকে থাকি পরের হামলায় বোমাটা বুঝি আমার ঘরের উপরেই নেমে আসবে”
গাজা, একটি শহর যা এখন আর নেই।
গাজার মানুষের কান্না কি পৌঁছাবে বিশ্ব বিবেকের দরজায়?