বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য, অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সম্প্রতি এক বক্তৃতায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, জনগণের আকাঙ্ক্ষা একটি নতুন, জনকল্যাণমুখী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। বিদ্যমান সংবিধানের কাঠামোগত দুর্বলতাকে তিনি বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত কর্তৃত্ববাদী শাসনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। এই শাসনব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (Proportional Representation) বা পি.আর. পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানান তিনি।
ডুমুরিয়া উপজেলার পল্লীশ্রী মহাবিদ্যালয় অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত একটি মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক পরওয়ার এসব কথা বলেন। এই সভায় শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক পরওয়ার বলেন, সাম্প্রতিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ডাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাকসু) নির্বাচনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নীরব ব্যালট বিপ্লব প্রমাণ করে যে তারা প্রচলিত লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তিনি বলেন, অতীতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনগুলোর দ্বারা পরিচালিত 'গেস্টরুম ও গণরুম সংস্কৃতি' এবং দলীয় কোন্দলের কারণে অনেক শিক্ষার্থীকে প্রাণ হারাতে হয়েছে, যার মধ্যে বুয়েটের সনি ও আবরার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু বকর, এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিফুজ্জামান নোমানীর মতো মেধাবী শিক্ষার্থীরা রয়েছেন।
তিনি বলেন, জনগণ এখন সচেতন এবং তারা এমন একটি জনকল্যাণমুখী বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করছে, যেখানে খুন, গুম, ধর্ষণ, দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহার হবে না। তার মতে, জনগণের সম্মিলিত প্রতিবাদ, যেমনটি কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় দেখা গিয়েছিল, একটি প্রতাপশালী সরকারের পতন ঘটাতে পারে।
জামায়াতের পক্ষ থেকে অধ্যাপক পরওয়ার বলেন, যে সংবিধানের সুযোগ নিয়ে একটি সরকার স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে, সেটিতে ন্যূনতম সংশোধন আনা প্রয়োজন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই সংবিধান সংশোধন করে পি.আর. পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে। এর মাধ্যমে জনগণের প্রকৃত আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, এবং ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দী ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ দেব প্রসাদ মণ্ডল।
অধ্যাপক পরওয়ার একই দিনে একাধিক সভায় যোগ দেন। সকালে তিনি স্বপ্না গাবতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চিংড়া ট্রলার ঘাটে পথসভায় বক্তব্য রাখেন এবং আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মদিনাতুল উলুম শোভনা মাদ্রাসায় মতবিনিময় করেন। বিকেলে সোনা বিরাজ মুই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কৃতী শিক্ষার্থীদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন। রাতে ফুলতলার পঠিয়াবান্ধা পূজামণ্ডপে অনুষ্ঠিত ভোটার সমাবেশে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
এছাড়াও, তিনি ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল খুলনায় চিকিৎসাধীন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্বের খোঁজখবর নেন।