আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা ও ভয়ভীতি কাজ করছে বলে মনে করছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, এই পরিস্থিতি একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
আগের নির্বাচনগুলোতে ডিসি, এসপি, ইউএনও এবং ওসির মতো কর্মকর্তারা ক্ষমতাসীন দলের প্রতি অনুগত থেকে বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এবার জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশাসনে বর্তমানে এক ধরনের 'মব ভীতি' বা গণভীতি কাজ করছে। এই ভীতি দূর করে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
নির্বাচনকালীন সময়ে ডিসি ও ইউএনওদের নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের যোগ্যতা ও নিরপেক্ষতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে বলে জনপ্রশাসন সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি জানিয়েছে। ইতোমধ্যে নতুন ডিসি নিয়োগ ও রদবদলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, "অনেকে পদোন্নতি পেয়েছেন, ধাপে ধাপে তারা উপরে আসবেন। আমরা অনেক জায়গায় নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়েছি এবং আরও কয়েকজনকে সরানো হবে। নির্বাচনের আগে প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হবে।"
অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসপি ও ওসি পদায়নের জন্য লটারির ঘোষণা দিয়েছে। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ডিসি ও ইউএনওদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অনুসরণ করছে না। এই লটারি পদ্ধতি নিয়ে সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, "লটারি করার মানে কী? এতে সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ পায়। সরকার যদি উপযুক্ত লোক বাছাই করতে না পারে বা রাজনৈতিক চাপ সামলাতে না পারে, তাহলে এটি তাদের নিজেদেরই দুর্বলতা।"
মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, "নিয়োগ ও বদলি-পদায়নের বিষয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট বিধিমালা রয়েছে। সবকিছু নিয়ম মেনেই হবে। এবার আমরা অনেক সময় ও মনোযোগ দিচ্ছি।"
সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া, যিনি নিজেও বিভিন্ন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছেন, মনে করেন যে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করাই সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, "বর্তমানে পুরো জনপ্রশাসনটাই অস্থির এবং দুর্বল। তাদের মধ্যে মারাত্মক একটা ভীতি কাজ করছে।" তার মতে, সরকারের উচিত কর্মকর্তাদের এই নিশ্চয়তা দেওয়া যে, কোনো গণবিক্ষোভ হলে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা সেনাবাহিনী দ্বারা প্রতিহত করা হবে।
মোখলেস উর রহমান অবশ্য প্রশাসনের প্রস্তুতি সম্পর্কে আশ্বস্ত করে বলেন, "প্রশাসনিক প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হালনাগাদ করা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার আগেই আমাদের যা যা প্রস্তুতি নেওয়ার, তা নেওয়া হয়ে গেছে। প্রশাসন প্রস্তুত।"
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু ডিসি-এসপি নয়, ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণের জন্য সাহসী ও নিরপেক্ষ প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়েও সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন।