জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের ভোট গণনা শুরু হওয়ার ৩৭ ঘণ্টা পরেও চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা হয়নি।
এর মধ্যেই নির্বাচনে প্রকাশ্য অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে রায় মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের নারী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী আঞ্জুমান ইকরা।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে আঞ্জুমান ইকরা বলেন, 'নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের ঊর্ধ্বে সুষ্ঠু ভোটের জন্য আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে দায়বদ্ধ ছিলাম। কিন্তু প্রশাসনের প্রকাশ্য অনিয়ম, কারচুপির পরও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে এই রায় আমাদেরকে মেনে নিতে হবে।' তিনি ছাত্রদলকে নিজেদের ভুলগুলো পুনর্বিবেচনা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানান।
তিনি আরও বলেন, ছাত্রদল তাকে এজিএস প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ দিয়েছে, যার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ। তিনি দলের দায়িত্বশীলদের প্রতি নিজেদের ভুলগুলো পুনর্বিবেচনা করে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করার অনুরোধ জানান এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি নতুন ক্যাম্পাস গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
একইভাবে জাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সৈয়দা অনন্যা ফারিয়াও ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। তিনি লেখেন, 'বিগত আওয়ামী শাসন গণতন্ত্র ও রাজনীতির যে ব্যাপক ক্ষতি করেছে তার সুদীর্ঘ প্রভাব থেকে আমরা এখনো বেরিয়ে আসতে পারিনি। ১৬টা বছর প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় যে ভয়াবহ প্রতিকূলতা ও চাপের মুখোমুখি আমরা হয়েছি, গুছিয়ে উঠতে সময় লাগাটা স্বাভাবিক।
জাবিতে ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি হয়েছে। তবে তিনি মনে করেন, এই নির্বাচন একচেটিয়াভাবে প্রত্যাখ্যান করা ছাত্রদলের গণতান্ত্রিক চর্চার সঙ্গে যায় না, বিশেষত যখন অধিকাংশ শিক্ষার্থী এটিকে ব্যর্থ নির্বাচন মনে করছেন না এবং ছাত্রদলও নিজেদের ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে অবগত।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান প্রজন্ম দায় চাপানোর রাজনীতিকে ঘৃণা করে। তাই এই প্রজন্মের আস্থা অর্জনের জন্য সত্যিকার কাজ করতে হবে। তিনি আত্মসমালোচনা করে, ইতিবাচক পরিবর্তন এনে জনগণের সমর্থন ও ভালোবাসা পুনরায় জয়ের আশা প্রকাশ করেন। শহীদ জিয়ার আদর্শে ঘৃণার রাজনীতির স্থান নেই উল্লেখ করে তিনি শুদ্ধতার রাজনীতি করার আহ্বান জানান।
তিনি তার পোস্টে বলেন, 'নির্বাচনের রায় যাই হোক, আমরা প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করব। আজ যে রায় আসবে, আসুন সেটাকে নিরপেক্ষ চোখে দেখি।' তিনি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তার পোস্ট শেষ করেন।
এদিকে, শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনে তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলনে অনিয়মের দায় স্বীকার করে জাকসু নির্বাচন কমিশন থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার।
অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, 'নির্বাচনে লেভেলে প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হয়নি, বিভিন্ন অনিয়ম হয়েছে। অনেক অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।' তিনি আরও বলেন, পদত্যাগ না করার জন্য তার ওপর চাপ ছিল, তবুও তিনি পদত্যাগ করছেন।
এর আগে জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে কারচুপিসহ বেশ কয়েকটি কারণ দেখিয়ে ভোট বর্জন করে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল। তারা বিক্ষোভ মিছিলও করে। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে এই মিছিলটি নতুন কলাভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে জাকসু নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের সামনের সড়ক হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।