বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম বলেছেন যে প্রতিক্রিয়াশীল, মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি বিভিন্ন অজুহাতে আসন্ন নির্বাচনের বিরোধিতা করছে। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সিপিবির ত্রয়োদশ কংগ্রেসের উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
শাহ আলম বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বলেন যে বিশ্ব আজ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়ার মতো দেশগুলোকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে এবং বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের মোড়লরা বিভিন্ন দেশে নয়া উপনিবেশ তৈরি করছে। তিনি অভিযোগ করেন যে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বাংলাদেশের করিডর ও গভীর সমুদ্রবন্দর ইজারা দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে করিডরের মাধ্যমে যুদ্ধ বাধাতে চাইছে। এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়।
সিপিবি সভাপতি আরও বলেন, আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদী সৈন্যরা বাংলাদেশে যৌথ মহড়া দিচ্ছে, যা দেশে একটি 'অগ্নিগর্ভ' পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তিনি মনে করেন, এই পরিস্থিতির সঙ্গে আসন্ন নির্বাচনের যোগসূত্র রয়েছে।
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) ব্যবস্থা প্রসঙ্গে শাহ আলম বলেন, সিপিবিই প্রথম আনুপাতিক নির্বাচনের দাবি তুলেছিল। তবে বর্তমানে তারা এই ব্যবস্থার ওপর জোর দিচ্ছেন না। তার মতে, পিআর ব্যবস্থা আগামী পার্লামেন্টের মাধ্যমে কার্যকর করা উচিত, কারণ বর্তমানে সংবিধানে এর কোনো বিধান নেই এবং নির্বাচন কমিশনও একই কথা বলেছে।
শাহ আলম বলেন, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনকে 'হাসিনা' সরকার নির্বাচনের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। তিনি মনে করেন, দেশের মানুষ এখন নির্বাচন চায়, কিন্তু প্রতিক্রিয়াশীল, মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি এর বিরোধিতা করছে। তিনি সতর্ক করেন যে নির্বাচন না হলে মৌলবাদীরা আরও শক্তিশালী হবে এবং দেশ একটি তালেবানি রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হতে পারে।
তিনি আরও বলেন যে জামায়াত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পাশাপাশি আরেকটি ক্ষমতা কেন্দ্র তৈরি করেছে। তাদের মতে, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বর্তমানে যে ক্ষমতা ভোগ করছে, তা নির্বাচনের বিরোধিতার কারণ। শাহ আলম উল্লেখ করেন যে বর্তমানে ক্ষমতার অনেকগুলো কেন্দ্র রয়েছে এবং নির্বাচন না হলে এই পরিস্থিতি চলতে থাকবে।
উদ্বোধনী অধিবেশনে শাহ আলমের সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও অধ্যাপক এম এম আকাশ, প্রেসিডিয়াম সদস্য এন এম রাশেদা, লক্ষ্মী চক্রবর্তী, সাজ্জাদ জহির চন্দন ও আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, কন্ট্রোল কমিশন সদস্য মাহবুব আলম এবং কংগ্রেস প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান আবু সায়ীদ।
এবারের কংগ্রেসের স্লোগান হলো: "সমাজ বদলের লক্ষ্যে শোষণ-বৈষম্যবিরোধী বাম গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা কর"। ত্রয়োদশ কংগ্রেস আগামী ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এবং সেদিন বিকেলে প্রতিনিধিরা সিপিবির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন।