বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী শনিবার (০৪ অক্টোবর) শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশের মানুষ আগামী ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করছে।
রিজভীর ভাষ্য, জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য প্রস্তুত। তিনি মন্তব্য করেন, যারা বর্তমানে নতুন নতুন ইস্যু তৈরি করে জনমতকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন, তাদের ষড়যন্ত্র সফল হবে না এবং তারা জনগণের কাছে ধরা পড়ে যাবেন। অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (অ্যাব) উদ্যোগে জিয়ার কবরে এই শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বিগত ১৬ বছরের নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ তুলে বলেন, এ সময়ে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। তিনি দাবি করেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে ভোটে তালা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল এবং নির্বাচনের নামে প্রহসন করা হয়। তার অভিযোগ, গরু-বাছুরকে ভোটকেন্দ্রে যেতে দেখা গেলেও ভোটারদের সুযোগ দেওয়া হয়নি; দিনের ভোট রাতে হয়েছে এবং র্যাব, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ব্যবহার করে ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়া ঠেকানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এবার নির্বাচন কমিশন এবং ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবে। এই সরকার নিরপেক্ষ থাকবে এবং কোনো পক্ষ নেবে না বলে তিনি আস্থা প্রকাশ করেন।
সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাধা প্রসঙ্গে রিজভী অভিযোগ করেন, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে একটি বিশেষ ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দলের সমর্থক আমলাদের বসানো হয়েছে। এটিকে তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, 'আমরা প্রত্যক্ষ করছি, জনগণও বুঝতে পারছে।' তিনি ড. ইউনূসের প্রতি আস্থা রেখে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনা তাঁর নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, ও পুলিশ ব্যবহার করে দেশে একদলীয় ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিলেন। জনগণ নতুন করে আরেকটি ফ্যাসিবাদী শাসন দেখতে চায় না।
রিজভী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ধারাবাহিকতা তুলে ধরে বলেন, বিএনপি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে জাতিকে একদলীয় দুঃশাসন থেকে মুক্ত করেছিল। এরপর খালেদা জিয়া স্বৈরাচার এরশাদকে পরাজিত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তারেক রহমান জাতিকে নতুন করে অনুপ্রাণিত করেছেন।
তিনি আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অভিযোগ এনে বলেন, জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করতে আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদীরা নানা চক্রান্ত করছে। ষড়যন্ত্র থেমে নেই, বরং তা বাস্তবায়নের জন্য মাস্টারপ্ল্যান চলছে। তবে তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, বাংলাদেশের জনগণ সব অন্ধকার দূর করে জাতীয়তাবাদের পতাকা উঁচু রাখবে, যা বারবার প্রমাণিত হয়েছে।
সাম্প্রতিক দুর্গাপূজা নিয়ে গুজব ও ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এবার দুর্গাপূজা অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে। হিন্দু-মুসলমান সবাই মিলে মণ্ডপ পাহারা দিয়েছে, যা বাংলাদেশের সম্প্রীতির ঐতিহ্য।
ভারতে ড. ইউনূসের মুখাবয়ব দিয়ে তৈরি 'অসুরের' মূর্তির সমালোচনা করে রিজভী এটিকে 'অত্যন্ত নিম্ন রুচির পরিচয় ও অপসংস্কৃতির প্রকাশ' বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ভারত সঙ্গীত-শিল্প-সংস্কৃতির দেশ, এমন কাজ তারা করবে, তা তারা কল্পনাও করেননি। রিজভী আরও বলেন, মোদি সাহেব যদি ভারতে মধ্যযুগীয় অন্ধকার নামিয়ে আনেন, বাংলাদেশের মানুষ সেটি গ্রহণ করবে না। তিনি তারেক রহমানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, দেশে বিভাজন তৈরি করা যাবে না এবং সবাই সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ থাকবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে রিজভী বলেন, ১৯৯১ সালে শেখ হাসিনা ভারত থেকে ফিরে এসে বলেছিলেন, বিএনপি ১০টির বেশি আসন পাবে না। কিন্তু জনগণ সব জানে, কারা বিগত ১৬ বছর ধরে আপসহীন লড়াই করেছে। তিনি বলেন, ধানের শীষ তাদের প্রিয় প্রতীক, এটিকে মিথ্যা প্রচার দিয়ে দুর্বল করা যাবে না।
এ সময় অ্যাব-এর সভাপতি শাহরিন ইসলাম তুহিনসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।