ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদলের অপ্রত্যাশিত পরাজয়ের কারণ নিয়ে কথা বলেছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল।
তার মতে, ছাত্রদলের এই ভরাডুবির পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে, যার মধ্যে জাতীয় রাজনীতির প্রভাব এবং জামায়াতে ইসলামীর কৌশলগত অবস্থান অন্যতম।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) তার নিজের ইউটিউব চ্যানেল 'কথা'-তে প্রকাশিত এক ভিডিওতে তিনি এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
মাসুদ কামাল বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন, অত্যাচার ও হয়রানি শুরু হয়। এসব ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রে বিএনপি নেতাকর্মীদের নাম উঠে এসেছে। শারীরিক নির্যাতন, গণপিটুনি, এবং পরবর্তীতে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এর ফলে অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের পাঁয়তারাও করা হয়।
তিনি উল্লেখ করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ করে, তারা সাধারণত এমন পরিবার থেকে আসে না যারা বিএনপি বা জামায়াতের রাজনীতিতে জড়িত। তাদের অনেকেই হয় বংশগতভাবে আওয়ামী লীগ সমর্থক, অথবা ঢাকায় এসে নতুন করে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। গত এক বছরে এই শিক্ষার্থীদের অনেকেই নিজ নিজ এলাকায় বিএনপি বা তার অঙ্গসংগঠন দ্বারা অত্যাচারিত ও নিগৃহীত হয়েছে। যখন একজন শিক্ষার্থী দেখছে যে তার বাবা বা পরিবারের অন্য সদস্য স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছেন, তখন তিনি বিএনপির অঙ্গসংগঠন হিসেবে ছাত্রদলকে ভোট দেবেন না। এটিই ডাকসু নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়েছে।
মাসুদ কামাল আরও বলেন যে ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের ভোট মূলত ছাত্রশিবিরের দিকে চলে গেছে। একমাত্র জগন্নাথ হল (হিন্দু অধ্যুষিত) ছাড়া প্রায় সব হলে এই ঘটনা ঘটেছে। এমনকি মেয়েদের হলগুলোতেও ছাত্রশিবির অপ্রত্যাশিতভাবে জয়লাভ করেছে, কারণ ছাত্রলীগের ভোট তাদের পক্ষে চলে গিয়েছিল।
এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক জানান, বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের এক ধরনের ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে। জামায়াত নেতারা মুখে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগবিরোধী কথা বললেও, মাঠ পর্যায়ে তারা আওয়ামী লীগকে এক ধরনের সমর্থন দিয়ে আসছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এটি ছিল জামায়াতের একটি কৌশল। যখন একজন আওয়ামী লীগ নেতা সংকটে পড়েন, তখন স্থানীয় জামায়াতের লোকজন তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা সম্পদ রক্ষার চেষ্টা করে। এর মাধ্যমে তারা আওয়ামী লীগ সমর্থকদের নিজেদের দিকে আনার চেষ্টা করেছে। এই তথ্য তিনি বিভিন্ন সূত্র থেকে পেয়েছেন বলে দাবি করেন।