জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে জনগণের অংশগ্রহণ ও সম্মতি নিশ্চিত করতে গণভোট আয়োজনের বিষয়ে সকল রাজনৈতিক দলই একমত হয়েছে। তবে গণভোট কখন অনুষ্ঠিত হবে, সেই সময় নিয়ে বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং জামায়াতে ইসলামী-এর মধ্যে ভিন্নমত দেখা দিয়েছে।
রবিবার (৫ অক্টোবর) ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শেষে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এই তথ্য জানান।
অধ্যাপক আলী রীয়াজের বক্তব্য অনুযায়ী, বিএনপি ও এনসিপি মনে করে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই আলাদা ব্যালটে গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী চাইছে নির্বাচনের আগেই যেন গণভোট অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সংসদ নির্বাচনের দিনই আলাদা ব্যালটে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে। তিনি একটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) এই গণভোট আয়োজনের নির্দেশনা দেওয়ার প্রস্তাব করেন।
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ গণভোটের আইনি ভিত্তির বিষয়ে একমত পোষণ করলেও নির্বাচনের আগে গণভোটের পক্ষে মত দেন। তিনি বলেন, “জাতীয় নির্বাচনে কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি না করে নভেম্বর অথবা ডিসেম্বরে গণভোট হতে পারে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেও হতে পারে।”
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মতের পক্ষে থেকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের দিন সাধারণ ভোটের পাশাপাশি গণভোটের জন্য আলাদা ব্যালট থাকবে, যেখানে সনদের আইনি ভিত্তির বিষয়ে জনগণ মতামত দেবে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, এটি জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রথম পদক্ষেপ। তিনি অন্যান্য বিষয়েও দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি আরও জানান, কমিশন সনদ বাস্তবায়নে সরকারের কাছে এক বা একাধিক সুপারিশ আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে দেবে। এর আগে আগামী ৮ অক্টোবর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবারও বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত আইনসভা জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে যে সংস্কার করবে, তা যেন টেকসই হয়, সে ব্যাপারেও কার্যত ঐকমত্য রয়েছে।
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান জানান, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ৮০ শতাংশ ঐকমত্য তৈরি হয়েছে এবং বাকি ২০ শতাংশ নিয়ে ঐকমত্য কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে এর আগে তিনবার গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে—দুইবার প্রশাসনিক এবং একবার সাংবিধানিক গণভোট।