ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধান যাকাত সমাজের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ ও দারিদ্র্য বিমোচনে কার্যকর ভূমিকা রাখে। আরবী শব্দ যাকাত এর আভিধানিক অর্থ পবিত্রতা, বৃদ্ধি ও প্রশংসা। যাকাত প্রদানের মাধ্যমে যেমন সম্পদ ও অন্তর পবিত্র হয়, তেমনি এতে বরকত আসে ও সম্পদ বৃদ্ধি পায়।
যাকাতের পারিভাষিক অর্থ:
ইসলামী শরীয়তে যাকাত হলো এমন একটি বাধ্যতামূলক দান, যা নির্দিষ্ট পরিমাণ (নিসাব) সম্পদের মালিক হলে এবং সেই সম্পদ এক বছর পূর্ণ হলে প্রদান করতে হয়। এটি কোনো দয়া বা দান নয়; বরং দরিদ্র ও অভাবীদের প্রাপ্য অধিকার। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর তাদের সম্পদে রয়েছে প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক” (সূরা যারিয়াত: আয়াত-১৯)।
দারিদ্র্য বিমোচনে যাকাতের প্রভাব:
যাকাত মূলত ধনী থেকে দরিদ্রের মাঝে সম্পদ হস্তান্তরের একটি শরীয়তসম্মত ব্যবস্থা, যা সমাজে ধনী-গরিবের বৈষম্য হ্রাস করে। এর মাধ্যমে গড়ে ওঠে অর্থনৈতিক সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা।
১. অসহায় মানুষের আর্থিক নিরাপত্তা: যাকাত দরিদ্রদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক নিরাপত্তার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
২. সম্পদের বৃদ্ধি ও বরকত: মহান আল্লাহ বলেন, “তোমরা যে যাকাত প্রদান কর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, তারাই বহুগুণ সম্পদ প্রাপ্ত” (সূরা আর-রুম: আয়াত-৩৯)।
৩. কর্মসংস্থান সৃষ্টি: যাকাতের অর্থ দিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা, কৃষি, গবাদি পশু পালনসহ নানা উপার্জনমুখী উদ্যোগে সহায়তা করা সম্ভব, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দারিদ্র্য দূর করে।
৪. অকল্যাণ দূরীকরণ: হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি তার সম্পদের যাকাত আদায় করে, আল্লাহ তার সম্পদকে অকল্যাণ থেকে রক্ষা করেন। (মাজমাউয যাওয়াইদ, ৩/৬)
৫. অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা: যাকাত প্রদানের মাধ্যমে সম্পদে বরকত আসে, যা সামগ্রিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করে।
বাধ্যতামূলক বিধান:
যাকাত কোনো স্বেচ্ছাসেবামূলক দান নয়; বরং এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরজ করা এক ইবাদত। নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে প্রত্যেক মুসলিমের জন্য যাকাত প্রদান করা অপরিহার্য। হাদিসে মহানবী (সা.) বলেছেন, “হে আদম সন্তান, আমার পথে খরচ করো, আমি তোমার জন্য খরচ করব” (বুখারী: হাদিস নং ৫৩৫২)।
যাকাত কেবল ইবাদতই নয়, এটি সমাজে ন্যায়ভিত্তিক সম্পদ বণ্টনের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এবং অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখে। তাই সমাজের প্রতিটি সামর্থ্যবান মুসলিমকে নিয়মিত যাকাত আদায়ের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।