চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার পর নারী শিক্ষার্থী ও সংগঠনগুলো নিরাপত্তা ইস্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, চবি শাখার নারী অঙ্গন বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) কলা ঝুপড়ির সামনে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। এ সংবাদ সম্মেলন থেকে সাত দফা দাবি উত্থাপন করা হয় এবং একই সাথে প্রধান উপদেষ্টার কাছে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে একটি খোলা চিঠি পাঠানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নারী অঙ্গনের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, গত ৩০ আগস্ট রাত থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ২ নম্বর গেট এলাকায় একজন নারী শিক্ষার্থী দারোয়ানের হাতে নির্যাতনের শিকার হন। এই ঘটনার সূত্র ধরে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, যাদের অনেকের অবস্থা গুরুতর।
সংগঠনটি অভিযোগ করে, পুরো ঘটনার শুরু থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উদাসীন ছিল। শিক্ষার্থীরা প্রক্টর অফিসে ফোন করেও কোনো সহায়তা পাননি। বরং, প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে। একই সাথে, নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, নির্যাতিতকে দোষারোপ করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগও আনা হয়।
সাত দফা দাবি
নারী অঙ্গন এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সাতটি প্রধান দাবি পেশ করেছে:
১. আহত শিক্ষার্থীদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা: আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় প্রশাসনকে বহন করতে হবে।
২. হামলাকারীদের দ্রুত বিচার: সংঘর্ষে জড়িত স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৩. ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ও আবাসন: ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আবাসন ভাতা চালু করতে হবে।
৪. পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করা: রিকশা ও সিএনজির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে ই-কার ও চক্রাকার বাস চালু করতে হবে।
৫. যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলের কার্যকারিতা: যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল কার্যকর করা এবং নৈতিক পুলিশিং, মবিং ও সাইবার বুলিং বন্ধ করতে হবে।
৬. আবাসন পূর্ণাঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা: পূর্ণ আবাসন সুবিধা চালু না হওয়া পর্যন্ত ১ ও ২ নম্বর সেট এবং বেলক্রসিং এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৭. উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ: শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থতার জন্য উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে পাঠানো খোলা চিঠিতে নারী অঙ্গন অভিযোগ করেছে যে, স্বাধীনতার পর বিশ্ববিদ্যালয়টি নতুন স্বপ্নের যাত্রা শুরু করলেও নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি প্রশাসনের বৈষম্যমূলক ও নারী বিদ্বেষী আচরণ ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। চিঠিতে প্রক্টরের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, সান্ধ্য আইন আরোপ, উদ্দেশ্যমূলক বহিষ্কারাদেশ এবং হেনস্তার ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে বলে উল্লেখ করা হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, সাইবার বুলিং, ধর্ষণের হুমকি এবং ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে সামাজিকভাবে হেনস্তার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে সতর্ক করা হয় যে, নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে টেকসই শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠক সুমাইয়া শিকদার বলেন, “যদি শুরু থেকেই প্রশাসন দায়িত্বশীলভাবে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করত, তবে আজ এত বড় ঘটনা ঘটত না। দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী আহত হতেন না এবং আমাদের সহপাঠীরা হাসপাতালের বিছানায় কষ্ট পেতেন না। প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা ও ধারাবাহিক অন্যায় কর্মকাণ্ডের কারণেই আমরা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি।”