বাংলাদেশ ছাত্রদল অভিযোগ করেছে যে গত ১৫ বছর ধরে ইসলামী ছাত্রশিবির ছাত্রলীগের পরিচয় ব্যবহার করে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। ছাত্রদলের নেতারা আরও দাবি করেন, পরিচয় গোপনের এই ধারা এখনো অব্যাহত রেখে তারা নারী নিপীড়নের ঘটনা ঘটাচ্ছে। তাদের অভিযোগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পৃষ্ঠপোষকতায় ক্যাম্পাসে ইসলামী ছাত্রশিবিরের এই গোপন রাজনীতি চলছে।
বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান ফটকে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এসব অভিযোগ করেন ছাত্রদলের নেতারা। ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে আদালতে রিট আবেদনকারী এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের হুমকির প্রতিবাদে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ছাত্রদলের নারী নেত্রীরাও বক্তব্য দেন। তারা জানান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের সাইবার বুলিংয়ের শিকার হওয়ায় তারা রাজনীতিতে আরও সক্রিয় হতে পারছেন না।
মানববন্ধনে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, "ছাত্রশিবির ১৫ বছর ধরে গুপ্ত রাজনীতি করছে। আমরা দেখেছি, তারা আল্লাহ থেকেও খুনি হাসিনাকে বেশি ভয় পেয়েছে। তারা সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের পদ-পদবি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী এবং ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেছে।" তিনি গুপ্তরাজনীতিকারীদের মুখোশ উন্মোচনের ঘোষণা দিয়ে বলেন, "ক্যাম্পাসে, রাজপথে—যেখানেই তারা গুপ্তরাজনীতি করবে, সেখানেই তাদের প্রতিহত করা হবে।"
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন বলেন, "ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া শিবিরের এক নেতা ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে আমাদের এক বামপন্থী বোন একটি রিট দায়ের করেছিল। সে অপরাধে গুপ্ত সংগঠন ছাত্রশিবিরের একজন কর্মী যেভাবে আমাদের সেই সহযোদ্ধা বোনকে পদযাত্রা করে গণধর্ষণের হুমকি দিয়েছিল, তার প্রতিবাদে এবং নারীদের ওপর সাইবার বুলিং ও শারীরিক আঘাতের প্রতিবাদে আমাদের এই মানববন্ধন।"
তিনি আরও বলেন, "বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বিশেষ করে উপাচার্য এবং প্রক্টরের পৃষ্ঠপোষকতায় ক্যাম্পাসে গুপ্তরাজনীতি চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথায় গুপ্তরাজনীতি চলছে, তা উপাচার্য ও প্রক্টর ঠিকই জানেন।" তিনি উপাচার্যের প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে গুপ্তরাজনীতিমুক্ত করার আহ্বান জানান।
মানববন্ধনে ছাত্রদলের নারী নেত্রী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুপন্তী রত্না বলেন, "আমরা নারী শিক্ষার্থীরা রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চাই, কিন্তু গুপ্ত সংগঠনের ভয়ভীতি আমাদের প্রতিদিন পিছু টেনে ধরে। যারা প্রকাশ্যে রাজনীতি করে না, তারা আড়ালে থেকে আমাদের হেয় করে, গালাগালি করে, হুমকি দেয়।" তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রাষ্ট্রকে এসব অপরাধীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
ছাত্রদলের সহসভাপতি রেহানা আক্তার শিরিন বলেন, "ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বিদায় করা হয়েছিল গণতন্ত্রের জন্য, কিন্তু এখনো রাজাকার-আলবদরের উত্তরসূরিরা সক্রিয়। আমরা চাই শিবিরকর্মী আলী হুসেন, যে প্রকাশ্যে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছে, তার সর্বোচ্চ শাস্তি হোক। একই সাথে যারা সাইবার বুলিং করছে, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে।"
ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির শিক্ষার্থী সাদিয়া সুলতানা অভিযোগ করেন, নারীদের হেনস্তা করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তিনি সরকারের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
মানববন্ধনটি সঞ্চালনা করেন ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মানসুরা আলম। এতে ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নারী নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।