বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পরিষদ নির্বাচন ২০২৫-এ বান্দরবানের কৃতি সন্তান আরমানুল ইসলাম নয়ন সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণের খবর প্রকাশের মধ্যেই ক্যাটাগরি-২ এর ১৮টি ক্লাবের কাউন্সিলরশিপ নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এসব ক্লাবের অস্তিত্ব ও বৈধতা সংক্রান্ত অভিযোগ বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নজরে আসে।
দুদক এ বিষয়ে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করে এবং এনফোর্সমেন্ট টিম বিগত ১৭.০৫.২০২৫ তারিখে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। উক্ত প্রতিবেদনে ১৮টি ক্লাব সম্পর্কে নিম্নোক্ত পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়:
"বর্ণিত অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে কেবল শান্তিনগর ক্লাবের গঠনতন্ত্র পাওয়া যায় এবং অধিকাংশ দল বিজ্ঞপ্তির আলোকে শর্তাদি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তবুও তাদের কে নিয়েই টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়েছে এবং অংশগ্রহণকারী দুইটা দলকেই তৃতীয় বিভাগ বাছাই লীগে উত্তীর্ণ করা হয়েছে।"
পর্যালোচনায় আরও বলা হয় যে, তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট বাছাই লীগ হতে উত্তীর্ণ দলের মালিক বিসিবির কাউন্সিলরশীপ অর্জন করতে পারেন। এতে বিসিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে পছন্দের দলকে বা মালিককে ভোটাধিকার প্রদানের মাধ্যমে 'দুর্নীতি ও অনিয়মের আশ্রয়ে ক্লাব ক্রিকেটকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়েছেন' বলে এনফোর্সমেন্ট টিমের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
উল্লিখিত ক্লাবগুলোর মধ্যে কতিপয়ের স্থায়ী ঠিকানা একই, অস্থায়ী ঠিকানা আবাসিক ভবন ও কর্পোরেট অফিস বা ব্যক্তির বাসায় ইত্যাদি নানা অসঙ্গতি রয়েছে বলেও অভিযানকালে জানা যায়। এছাড়া ক্লাবগুলোতে বিসিবির একাধিক কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে মর্মে তথ্য পাওয়া যায়। বর্তমানে ক্লাবগুলো নাম পরিবর্তন ও কমিটির সদস্য পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছে বলে বিসিবি থেকে তথ্য দেওয়া হয়। এনফোর্সমেন্ট টিমের মতে, "কঠিন শর্তাদি আরোপ ও শর্তাদি না মেনে অনিয়মের মাধ্যমে বিসিবি কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক তাদের পক্ষের ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধির নিমিত্ত তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট বাছাই লীগ আয়োজন ও ব্যবস্থাপনার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়।" এমতাবস্থায়, অভিযোগটির বিষয়ে প্রকাশ্য অনুসন্ধান করার সুপারিশ করা হয়।
উক্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর দুদকের উপপরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) ১৩.০৭.২০২৫ তারিখে স্মারক নম্বর: ০০.০১.০০০০.১০৯.৩০.০০১.২৪-৩৫৪৫১ মূলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে উক্ত প্রতিবেদনের আলোকে বর্ণিত বিষয়াদি সার্বিকভাবে বাস্তবায়ন পূর্বক কমিশনকে অবহিতকরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করে। তবে বিসিবি উক্ত পত্রের কোনো জবাব প্রদান করেনি। পরবর্তীতে দুদক ০৮.০৯.২০২৫ তারিখে একটি তাগিদ পত্র প্রেরণ করলেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড তারও কোনো জবাব দেয়নি।
এমতাবস্থায়, নির্বাচন কমিশন ১৮.০৯.২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে একটি পত্র প্রেরণ করে উক্ত ১৮টি ক্লাব আগামী নির্বাচন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবে কি না সে বিষয়ে সুস্পষ্ট মতামত জানতে চায়।
জবাবে বিসিবি তাদের গঠনতন্ত্রের ১০ অনুচ্ছেদের বরাতে নির্বাচন কমিশনকে নিম্নরূপ মতামত প্রদান করে:
"অতএব উক্ত বিষয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মতামত হলো, যেহেতু আপনার পত্রে উল্লেখিত ক্রীড়া সংগঠনসমূহের বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রচলিত ফৌজদারী আইন অনুসারে কোনও দন্ডাদেশ প্রদান করা হয় নি, সেহেতু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এর সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০ এর আলোকে দুদকের অনুসন্ধান বা পর্যবেক্ষণ উল্লেখিত ক্রীড়া সংগঠনসমূহে যোগ্যতাকে প্রভাবিত করবে না। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের উপরই ন্যস্ত।"
এরপর বিসিবি উক্ত ১৮টি ক্লাবের মধ্য হতে ১৫টি ক্লাবের নাম ক্যাটাগরি-২ এর কাউন্সিলর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে কমিশনে প্রেরণ করে।
দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম যেহেতু অভিযোগটির বিষয়ে প্রকাশ্য অনুসন্ধানের সুপারিশ করেছে, তাই ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ ও বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করে নির্বাচন কমিশন ওই ১৫টি ক্লাবকে তালিকার বাইরে রেখে ৬১টি ক্লাব নিয়ে ক্যাটাগরি-২ এর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করিবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।