রংপুরের আলোচিত ইসলামী বক্তা আবু ত্বহা মোহাম্মদ আদনানকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) রাতে তার স্ত্রী সাবিকুন নাহারের একটি ফেসবুক পোস্ট আলোচনার জন্ম দেয়। এ বিষয়ে নীরবতা পালনের পর সোমবার (৬ অক্টোবর) একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে আবু ত্বহা মোহাম্মদ আদনান তার স্ত্রীর অভিযোগগুলোর ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
পোস্টের শুরুতেই আবু ত্বহা তার স্ত্রী সাবিকুন নাহারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তার সম্প্রতি করা দুটি ফেসবুক পোস্টই তার প্রতি স্ত্রীর অপার ভালোবাসার নিদর্শন। তবে তিনি স্বীকার করেন যে স্ত্রী ভুল করেছেন এবং ভুল বুঝেছেন। তিনি জানান, সাবিকুন নাহার অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চেয়েছেন, যা তার (ত্বহার) কাছে যথেষ্ট।
আবু ত্বহা মোহাম্মদ আদনান তার স্ত্রীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, বিগত চার বছরের সংসার জীবনে তিনি স্ত্রীর দ্বারা অসংখ্যবার আহত ও ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন, এমনকি একে অপরকে ছেড়ে দেওয়া বা আরও বিয়ে করার বিষয়ও এসেছিল। তবে তার গুম হওয়ার সাতটি দিনে স্ত্রীর অবদানের সামনে সেসব তুচ্ছ। তিনি তার মা, পরিবার, স্ত্রী ও মুহিব্বিনদের দ্বীনের পথে শক্তি জোগান দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি আল্লাহর ওয়াস্তে তার স্ত্রীকে কোনো প্রকার কটূ কথা না বলার জন্য সবার প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, পাঁচ বছর ধরে তিনি নিজেই যথেষ্ট কটূক্তি শুনেছেন এবং 'জঙ্গি', 'খারেজি', 'মৌলবাদী' ইত্যাদি লকবে অভ্যস্ত। তিনি মনে করেন, এসব অপবাদ কিয়ামতের মাঠে তাদেরই গুনাহের পাল্লা ভারি করবে।
ত্বহা জানান, তার স্ত্রী কিছুটা 'অবুঝ, অস্থির, অতিরিক্ত জেদি ও ভালোবাসার পাগল' হলেও তার ইলমি, দারসি, কিতাবি, তালিমি ও তাদরিসি যোগ্যতা দেশে খুব কম মেয়ের মাঝেই আছে। তিনি নিজেই স্ত্রীর কাছে 'সিফাত, তাজবিদ, উর্দু ও সফর' শিখেছেন। তিনি আরও বলেন, বিগত সময়ে তার স্ত্রীর এই অস্থির স্বভাবই তাদের দাওয়াহকে দেশব্যাপী গণজোয়ার ও কোটি মানুষের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করেছিল। তবে পারিবারিক জীবনে তাকে দেওয়া কষ্ট এবং বর্তমান মানহানি, ভুল তথ্য প্রচারের জন্য তিনি স্ত্রীর ক্ষমা এবং উভয়ের ইসলাহের জন্য দোয়া করেন।
আবু ত্বহা মোহাম্মদ আদনান কয়েকটি পয়েন্টে তার ফেসবুক পোস্টের বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করেছেন:
নিজের অতীত অন্ধকার ছিল স্বীকার করে আবু ত্বহা জানান, ১৫ বছর আগে তিনি জাহেলিয়্যাতে ছিলেন। তিনি ভালো লেভেলের ক্রিকেটার, ইংলিশ পড়ুয়া, ড্যাম গুড লিড গিটারিস্ট কাম ভোকাল, ব্যান্ড সদস্য ও স্পোর্টসম্যান ছিলেন। শৈশবে কওমি আলেমদের কাছে কুরআন ও দীনিয়াত শিখলেও বাবার ইন্তেকালের পর জাহালাতে হারিয়ে যান। ১৫ বছর আগে তাবলীগ দিয়ে আবার দ্বীনে ফেরেন।
তিনি স্বীকার করেন যে জেনারেল থেকে দ্বীনে ফেরা কারও জীবনে 'ফাস্ট' থাকা অস্বাভাবিক নয়, তবে তিনি প্রথমজন ছেড়ে গন্তব্যে ছুটেছেন।
স্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তিনি কেবল বিয়েতে বিশ্বাসী এবং স্ত্রী নিজেই এর সাক্ষী। দ্বীনে ফিরে তিনি দুজন নারীর দায়িত্ব নিয়েছেন, যার কোনোটিই 'লাভ ম্যারেজ' নয়, সবই 'অ্যারেঞ্জ'। তিনি আরও বলেন, তিনি প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করেননি, এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করেননি বা করতে চাননি। তিনি বলেন, তিনি করলে সারা দুনিয়াকে জানিয়েই বিয়ে করতেন।
আবু ত্বহা মোহাম্মদ আদনান তার স্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্ট এবং দুনিয়া ও আখিরাতে তার যাওজ (স্বামী) হয়েই থাকতে চান। তিনি প্রশ্ন করেন, এই কথাগুলো কি চার দেয়ালের মধ্যেই সমাধান করা যেত না? তিনি মনে করেন, এতে কেবল 'দ্বীনের দুশমনদের', শত্রুদের, হিংসুকদের ও মুনাফিকদের লাভ হয়েছে।
সবশেষে, তিনি স্ত্রীকে অসম্ভব ভালোবাসেন জানিয়ে বলেন, তিনি স্ত্রীর সাথে কোনো অন্যায় করেননি এবং যদি হালাল কিছু করতেন, তা জানিয়ে করতেন। তিনি বলেন, 'কোনো কিছুর বিনিময়েও আমি তোমাকে হারাতে চাই না। আর এতকিছুর পরেও আমি তোমাকে ছেড়ে দেব না।'
তিনি নিজের সাথে ঘটে যাওয়া 'জুলুম ও অন্যায়ের' জন্য এবং কষ্ট দেওয়াকারীদের সবার জন্য ক্ষমা ও ইসলাহের দোয়া করেন।