প্রশাসনে এখনো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুগত কর্মকর্তারা বহাল আছেন এবং তারাই মূলত দেশ পরিচালনা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও কলামিস্ট গোলাম মাওলা রনি। তার দাবি, শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ‘উত্তাল’ করে তুলছেন এবং দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
বুধবার (১ অক্টোবর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।
গোলাম মাওলা রনি উল্লেখ করেন, “শেখ হাসিনার লোকজনই এখন দেশ চালাচ্ছেন। আমাদের বাধ্য হয়েই তাদের কাছে রাখতে হচ্ছে।” তিনি জানান, শেখ হাসিনা দেশ থেকে চলে যাওয়ার পর সরকার হয়তো পাঁচজন সচিবকে পরিবর্তন করেছে, ২০ জন অতিরিক্ত সচিবকে বহিষ্কার করেছে, ৫০ থেকে ৬০ জনকে শোকজ করেছে কিংবা দুর্নীতি দমন কমিশনে ৪০০ থেকে ৫০০টি মামলা করেছে।
তবে তিনি মনে করিয়ে দেন, দেশে প্রায় ২০ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন, যাদের মধ্যে আনুমানিক ৫০ শতাংশ আওয়ামী লীগে নিবেদিত ছিল। এছাড়াও, জামায়াত ও বিএনপির অনেক নেতাকর্মীও প্রয়োজনে 'জয় বাংলা' স্লোগান দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে রাতারাতি তাদের মনোভাব পরিবর্তন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি মনে করেন।
গোলাম মাওলা রনি অভিযোগ করেন, “কুড়িগ্রামের যুবলীগের লোকজন শিবিরের ভয় কিংবা ছাত্রদল অথবা সমন্বয়কদের ভয়ে এলাকায় থাকতে পারছে না। তারা ঢাকা শহরে এসে শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে শক্তি অর্জন করেছে। সেই শক্তি দিয়ে তারা এখন বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধ করবে।” তিনি আরও বলেন, “শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উত্তাল করে দিচ্ছে এবং শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দেশ-বিদেশ থেকে একে ৪৭ থেকে শুরু করে যত রকম রকেট লাঞ্চার রয়েছে সেসব আমদানি করে তারপর গৃহযুদ্ধ করবে।”
তবে একইসঙ্গে তিনি এসব অভিযোগের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার মতে, গৃহযুদ্ধ করতে হলে সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে, যা সহজ বিষয় নয়। এই খবরগুলো মূলত জনগণকে ভয় দেখানো, বিনোদন দেওয়া এবং গণমাধ্যমগুলোর নিজেদের কাটতি বাড়ানোর জন্য পরিবেশন করা হচ্ছে বলে তিনি মত দেন।
ভারতে স্বেচ্ছায় নির্বাসিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে চমকপ্রদ খবর প্রকাশিত হচ্ছে বলে গোলাম মাওলা রনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “দিল্লিতে কী করছেন। কী খাচ্ছেন। কোথায় থাকছেন? কার সঙ্গে কী বৈঠক করছেন — মানে তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি যদি কোনো দিন এটি তেলাপোকার সঙ্গে কথা বলেন। কোনো একটা তেলাপোকাকে পাড়িয়ে মারেন অথবা একটা চড়াই পাখি কিংবা শালিক অথবা দোয়েল পাখিকে একটু খুদ দেন, খাবারদাবার দেন, মুড়ি-বুট দেন। এগুলো এখন বাংলাদেশের পত্রপত্রিকার জন্য সবচেয়ে বড় খবর।”
তিনি আরও মন্তব্য করেন যে, শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ ছাড়া এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মানুষ অন্য কিছু শুনতে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করছে না। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যেমন, আলী রিয়াজের ঐকমত্য কমিশনে বৈঠক, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের শপথ গ্রহণ কিংবা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমেরিকা সফর — এসব খবর মানুষ তেমন পাত্তা দিচ্ছে না। শেখ হাসিনাকে নিয়ে যেকোনো ভিডিও বা অডিও প্রকাশ করলেই তা দ্রুত ভিউ পাচ্ছে এবং নিউজ ভ্যালু তৈরি করছে।
গোলাম মাওলা রনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে খবরের দুর্ভিক্ষ চলছে। খুন, ধর্ষণ, পাহাড়ে আগুন, খাগড়াছড়িতে গোলাগুলি, কিংবা জেলখানায় বড় বড় মানুষের মৃত্যু বা অসুস্থতা — এসব বিষয়ে মানুষের কোনো আগ্রহ নেই। মানুষের আগ্রহ নেই ইউনূস সাহেব, হাসানুল হক ইনু বা দীপু মনির মতো ব্যক্তিদের প্রতিও। শেখ হাসিনার বিচার চললেও মানুষ মনোযোগ দিচ্ছে দিল্লিতে বসে তিনি কী বলছেন তার ওপর।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা আমাদের ছ্যাঁকা দিয়েছেন। ধোঁকা দিয়েছেন। আমাদের সাগরে ফেলে দিয়ে তিনি হেলিকপ্টারে করে চলে গেছেন।” তিনি প্রতীকী অর্থে বলেন যে, জনগণ যদি সত্যিই ক্রুদ্ধ থাকত, তবে হেলিকপ্টারে করে তাকে দিল্লিতে পৌঁছে দেওয়া হেলিকপ্টারটির ক্ষতিসাধন করত।
গোলাম মাওলা রনি জানান, সরকারি আমলা ও কর্মকর্তারাও বর্তমানে নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন। এর পাশাপাশি, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড কার্যত বন্ধ রয়েছে। বছরে প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকার যে সরকারি পূর্ত নির্মাণকাজ হয়, তা বন্ধ থাকায় কন্ট্রাক্টর, দালাল এবং ফড়িয়াদের মধ্যে লেনদেনও থেমে আছে।