চলতি অর্থবছরের আগস্ট মাসে কিছুটা নিম্নগামী হওয়ার পর সেপ্টেম্বরে দেশের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত সর্বশেষ মাসিক ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮.৩৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা আগস্টে ছিল ৮.২৯ শতাংশ। এই সময়ে খাদ্য এবং খাদ্যবহির্ভূত উভয় খাতের পণ্যেই দাম বেড়েছে।
বিবিএস-এর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৮.৩৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে যে পণ্য ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তা কিনতে খরচ হয়েছে ১০৮ টাকা ৩৬ পয়সা। এই পণ্যগুলোর দাম আগস্ট মাসের তুলনায়ও বেশি ছিল।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬.৫ শতাংশের মধ্যে রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিও ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) গড় মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা ছিল। তবে বর্তমান প্রবণতা বজায় থাকলে এই লক্ষ্য পূরণ করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। উল্লেখ্য, গত অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি ছিল।
সেপ্টেম্বর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়ে ৭.৬৪ শতাংশে পৌঁছেছে, যা আগস্টে ছিল ৭.৬ শতাংশ। অন্যদিকে, খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতিও বৃদ্ধি পেয়ে ৮.৯৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা আগের মাসে ছিল ৮.৯ শতাংশ।
সেপ্টেম্বরে শহরের তুলনায় গ্রামীণ অঞ্চলে জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি হয়েছে। এ মাসে গ্রাম এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৮.৪৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যেখানে শহর এলাকায় তা সামান্য কমে ৮.২৮ শতাংশে নেমেছে।
গ্রামীণ মানুষের জন্য খাদ্যপণ্যের চেয়ে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের কেনাকাটায় বেশি চাপ সৃষ্টি হয়েছে বলে সিপিআই তথ্য নির্দেশ করে।
সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের পরেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। প্রতিবেশী দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতির হার তুলনামূলকভাবে কম: ভারতে ২.০৭ শতাংশ, পাকিস্তানে ৫.৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ১.৫ শতাংশ, নেপালে ১.৬৮ শতাংশ এবং ভূটানে ৩.৬ শতাংশ।
তবে, একক মাস হিসেবে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ১.৫৬ শতাংশ কমেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৯২ শতাংশ।