আসন্ন দুর্গাপূজা ২০২৫ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস হিন্দু ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হয়েছেন। সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে পূজা উদযাপন পরিষদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন এবং তারা প্রধান উপদেষ্টাকে আসন্ন দুর্গাপূজার মণ্ডপ পরিদর্শনের জন্য আমন্ত্রণ জানান।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা পূজা উপলক্ষে আয়োজিত প্রস্তুতি ও সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান। এর জবাবে হিন্দু ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর সারাদেশে এক হাজারেরও বেশি পূজা মণ্ডপ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। তাঁরা আরও জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল পক্ষ থেকে এবার পূজায় পূর্ণ সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তাঁরা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিবের বিশেষ ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। নেতারা বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয় নিয়মিত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং মন্দির পরিদর্শন করছে। তারা আশা প্রকাশ করেন, প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহযোগিতার কারণে গত বছরের মতো এবারও পূজা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হবে।
বৈঠকে মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব স্থায়ী দুর্গামন্দিরের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি এটিকে একটি ‘ঐতিহাসিক ঘটনা’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং বলেন, প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নিয়মিত তাদের খোঁজখবর রাখছেন। তিনি গত বছরের মতো এ বছরও দুই দিনের সরকারি ছুটি মঞ্জুর করায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর গত বছর ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনের সময় প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া একটি বক্তব্যের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “আপনি বলেছিলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কড়া পাহারা বসিয়ে পূজা হবে এমন দেশ আমরা চাই না।’ এটি ছিল কোনো সরকারপ্রধানের কাছ থেকে শোনা প্রথম এ ধরনের বক্তব্য।” তিনি প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, তাঁরাও চান দেশের সকল মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকুক।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তাঁর দায়িত্বকালে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া মিথ্যা ও ভুয়া তথ্যের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে দেশের সকল ধর্ম, বর্ণ ও জাতির মানুষের কল্যাণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় সকল ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে এবং কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে বিভিন্ন কল্যাণমূলক কার্যক্রম নিশ্চিত করে। তিনি জানান, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে একটি মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছে এবং অস্বচ্ছল মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জাকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, অস্বচ্ছল বিধবা নারী ও অনাথ আশ্রমকেও সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে পূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। তিনি দুর্গাপূজা ঘিরে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সুযোগ যাতে তৈরি না হয়, সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার, এবং বিভিন্ন পূজা ও ধর্মীয় সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।