ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল জানিয়েছেন, ফায়ার সার্ভিসে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের দুর্নীতি বা 'নিয়োগ বাণিজ্য' বন্ধে কঠোর 'জিরো টলারেন্স' নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। শতভাগ স্বচ্ছ ও দক্ষ জনবল নিয়োগের জন্য অধিদপ্তর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সম্প্রতি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)-এর সদস্যদের জন্য আয়োজিত দুই দিনব্যাপী অগ্নি নিরাপত্তাবিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মহাপরিচালক এই কথা বলেন। প্রশিক্ষণটি ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর (সোমবার ও মঙ্গলবার) অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে মহাপরিচালক ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি বলেন, দুর্যোগ-দুর্ঘটনার সময় সবার আগে ফায়ার সার্ভিস ও সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এই দুই পেশার মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় থাকলে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, সচেতনতা বাড়ানো গেলে অনেক বিপদ এড়ানো সম্ভব। এ লক্ষ্যে ৫ম থেকে ৯ম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে ফায়ার সার্ভিসবিষয়ক পাঠ অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা শিগগিরই কার্যকর হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এর ফলে শিক্ষার্থীরা ছোটবেলা থেকেই সচেতন হওয়ার সুযোগ পাবে।
জনবল সংকট প্রসঙ্গে মহাপরিচালক বলেন, যেকোনো দুর্ঘটনায় আমাদের কর্মীদের অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়, যার জন্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে তাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি স্বেচ্ছাসেবী বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন এবং বলেন, বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ৫৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবী আছেন। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক জেলায় তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যৌক্তিক সমালোচনা অধিদপ্তরের জন্য উপকারী, কারণ এটি আমাদের সুবিধা-অসুবিধা চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। তবে অপেশাদার লেখা অনেক সময় মানুষকে বিভ্রান্ত করে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরও জানান, ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রম যেন ব্যাহত না হয়, সেজন্য পূর্বাচলে একটি বিশেষ দলকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল বলেন, বিল্ডিং কোড অনুসরণ করে ভবন নির্মাণ করা হলে দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমে যাবে। প্রশিক্ষণের আয়োজন করায় তিনি ফায়ার সার্ভিসকে ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতে এমন প্রশিক্ষণ আরও বাড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি ফায়ার সার্ভিসের মাসিক কার্যক্রম নিয়ে গণমাধ্যমে তথ্য উপস্থাপনের পরামর্শও দেন।
এই দুই দিনের প্রশিক্ষণে বক্তব্য রাখেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লে. কর্নেল এম এ আজাদ আনোয়ার এবং ডিআরইউ তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক মো. বোরহান উদ্দিন।
প্রশিক্ষণে অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ কৌশল, জরুরি উদ্ধার পদ্ধতি, প্রাথমিক চিকিৎসা, ভবন থেকে জরুরি বহির্গমন ব্যবস্থাপনা, ভূমিকম্পের আগে ও পরে করণীয়, উদ্ধার কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম পরিচিতি এবং নিরাপদ সংবাদ কভারেজের কৌশল শেখানো হয়।
প্রশিক্ষণটির কো-অর্ডিনেটর ছিলেন মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার। প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক মো. ছালেহ উদ্দিন, সহকারী পরিচালক (প্রশিক্ষণ) মোস্তফা মহসিন, সিনিয়র স্টেশন অফিসার আনোয়ারুল ইসলাম দোলন এবং স্টেশন অফিসার তালহা বিন জসীম।
এছাড়াও ডিআরইউ'র যুগ্ম সম্পাদক নাদিয়া শারমিন, দপ্তর সম্পাদক রফিক রাফি, নারী সম্পাদক রোজিনা রোজি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মিজান চৌধুরী, ক্রীড়া সম্পাদক মুজিবর রহমান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক এমদাদুল হক খান, কল্যাণ সম্পাদক রফিক মৃধা এবং কার্যনির্বাহী সদস্য সুমন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। দুই দিনের এই প্রশিক্ষণে ডিআরইউ-এর ৪০ জন সদস্য অংশগ্রহণ করেন।