বিদেশে পাচার হওয়া অবৈধ সম্পদ পুনরুদ্ধার বর্তমানে শীর্ষ অগ্রাধিকারে রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির ওপর জোর দেন।
প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, গত ১৫ বছরে দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি ডলার অবৈধভাবে দেশ থেকে পাচার করা হয়েছে। সরকার এই সম্পদ ফেরত আনার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইনি প্রক্রিয়া এবং নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা এই পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করছে।
প্রফেসর ইউনূস মনে করেন, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর দৃঢ় সদিচ্ছা ছাড়া পাচার হওয়া অবৈধ সম্পদ পুনরুদ্ধারে সফলতা পাওয়া সম্ভব নয়। তিনি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সমালোচনা করে বলেন যে এটি উন্নয়নশীল দেশ থেকে সম্পদের অবৈধ পাচার কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তার মতে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিধি-বিধান বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেন-এ বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ স্থানান্তরে উৎসাহিত করছে।
তিনি যেসব দেশ ও প্রতিষ্ঠান পাচারকৃত সম্পদ গচ্ছিত রাখার সুযোগ দিচ্ছে, তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা এই অপরাধের শরিক না হন এবং এই সম্পদ এর প্রকৃত মালিক—অর্থাৎ কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ করদাতাদের নিকট ফিরিয়ে দেন। তিনি উন্নয়নশীল দেশ থেকে সম্পদ পাচার রোধে কঠোর আন্তর্জাতিক বিধি-বিধান প্রণয়ন এবং এর প্রয়োগ নিশ্চিতের প্রস্তাব করেছেন।
জলবায়ু সংকট মোকাবিলা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বজনীন তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যমাত্রা আজ হাতছাড়া হয়ে গেছে। এছাড়া, প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু সহায়তার প্রতিশ্রুতিও পূরণ হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, যে ক্ষুদ্র অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ হয়, তাও কাগজে-কলমে বহুগুণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।
তিনি আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যতের জন্য এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং 'লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড' পুরোপুরি চালু করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তাঁর মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রশমন ও অভিযোজন—উভয় উদ্যোগেই সমান গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। অভিযোজন প্রচেষ্টা হতে হবে দেশজ, স্থানীয়ভাবে নির্ধারিত ও পরিচালিত।
প্রধান উপদেষ্টা আরও জানান, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্থানীয়ভাবে সংবেদনশীল অভিযোজনের নীতিকে মূল ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছে। আসন্ন কপ-৩০ সম্মেলনে বাংলাদেশ তৃতীয়বারের মতো জলবায়ু পরিবর্তন রোধকল্পে জাতীয় প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করবে। এই প্রতিশ্রুতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রশমন লক্ষ্যের পাশাপাশি অভিযোজন উদ্যোগও থাকবে এবং ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল রক্ষা ও জলাভূমি পুনরুদ্ধার গুরুত্ব পাবে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে বৈশ্বিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে উচ্চ-কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলো, তাদের দায়িত্বটুকু আন্তরিকভাবে পালন করবে।