জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল সম্প্রতি ২০২৪ সালের বাংলাদেশের গণ-অভ্যুত্থান এবং নেপালের সাম্প্রতিক আন্দোলনের পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার আলোচনার মূল বিষয় ছিল উভয় দেশের সরকার গঠন প্রক্রিয়া ও নির্বাচনের সময়সীমা। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, নেপালিরা বাংলাদেশের চেয়ে দ্রুত নির্বাচন দিতে সক্ষম হয়েছে কারণ তারা "বুদ্ধিমান, কম লোভী এবং কম মতলববাজ।"
মাসুদ কামাল বলেন, উভয় দেশের আন্দোলনে তরুণ প্রজন্ম যুক্ত হলেও কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। বাংলাদেশের গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন সরকার তরুণদের "নিয়োগকর্তা" হিসেবে অভিহিত করে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিল। এর ফলে, সাধারণ চাকরিপ্রার্থীদের মধ্য থেকে মন্ত্রী নিয়োগ করা হয়েছিল। তিনি জানান, নেপালে এমনটা ঘটেনি, এবং তাদের নতুন সরকার প্রধান তরুণদের কোনো রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য উৎসাহিত করেননি।
মাসুদ কামাল আরও উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটি বড় পার্থক্য হলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। তার মতে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস "ভুলিয়ে দেওয়ার" একটি প্রবণতা রয়েছে, যা নেপালের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তিনি আরও বলেন, নেপালে কোনো নোবেল বিজয়ী না থাকাও তাদের একটি বাড়তি সুবিধা। কারণ, কোনো নোবেল বিজয়ীর উপস্থিতিতে তার বক্তব্যের বিরুদ্ধে সহজে কিছু বলা যায় না।
মাসুদ কামাল বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে "ছোট প্যাকেজ" ও "বড় প্যাকেজ" হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ছোট প্যাকেজ অনুযায়ী দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও তা না হলে "বড় প্যাকেজ" কার্যকর হতে পারে। তার মতে, বিদেশ থেকে "ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী" এনে সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, এই বুদ্ধিজীবীরা নিজেদের মহাজ্ঞানী মনে করেন এবং তাদের ছাড়া দেশ উদ্ধার সম্ভব নয় বলে মনে করা হয় ।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে কোনো পক্ষ যদি সরকারের সিদ্ধান্ত না মানে, তবে তাদের "শায়েস্তা" করার জন্য 'মব' বা জনতা রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থাপনা ভেঙে ফেলার উদাহরণও তিনি তুলে ধরেন। এসব কারণে নেপালিদের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের তুলনায় সহজ বলে তিনি মনে করেন।
মাসুদ কামাল বলেন, আইকিউতে নেপালের অবস্থান বাংলাদেশের নিচে বলে ধরা হলেও তার ব্যক্তিগত ধারণা ভিন্ন। তার মতে, নেপালিরা বুদ্ধিমান এবং কম লোভী হওয়ার কারণেই ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পেরেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পক্ষে দেড় বছরে নির্বাচন করা সম্ভব হবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত।