অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটের জন্ম মিয়ানমারে, তাই এর সমাধানও সেখানেই রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে মিয়ানমার ও আরাকান সেনাবাহিনীর ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। একই সাথে তিনি রাখাইনে রোহিঙ্গাদের দ্রুত ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য কাজ শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরের জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে আয়োজিত রোহিঙ্গা বিষয়ক এক উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এই মন্তব্য করেন এবং সংকট নিরসনে সাত দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন।
রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস যে সাতটি প্রস্তাব পেশ করেছেন, তা নিম্নরূপ:
১. নিরাপদ প্রত্যাবাসনের রোডম্যাপ: রাখাইনে যুক্তিসঙ্গত স্থিতিশীলতার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য একটি বাস্তব রোডম্যাপ তৈরি করা। ২. সহিংসতা বন্ধে চাপ: রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করতে মিয়ানমার ও আরাকান সেনাবাহিনীর ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করা এবং সম্প্রতি যারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন এবং অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, তাদের ফেরত নেওয়ার মাধ্যমে টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করা। ৩. আন্তর্জাতিক উপস্থিতি: রাখাইনকে স্থিতিশীল করতে আন্তর্জাতিক সমর্থন জোগাড় করা এবং স্থিতিশীলতা পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক বেসামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করা। ৪. আস্থা তৈরি: রাখাইন সমাজ ও শাসনে রোহিঙ্গাদের টেকসই সংহতকরণে আস্থা তৈরির পদক্ষেপে সহায়তা করা। ৫. দাতাদের সহায়তা: যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনার সম্পূর্ণ তহবিলের জন্য দাতাদের সহায়তা একত্রিত করা। ৬. জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার: জবাবদিহিতা এবং পুনরুদ্ধারমূলক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। ৭. অপরাধ দমন: মাদকদ্রব্য সংশ্লিষ্ট অর্থনীতি ধ্বংস করা এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করা।
প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরার জন্য বিশ্ব আর অপেক্ষা করতে পারবে না। তিনি সংকট সমাধানে একসঙ্গে কাজ করার শপথ নিতে আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৫ আগস্ট কক্সবাজারের রোহিঙ্গা বিষয়ে আঞ্চলিক সম্মেলনেও প্রধান উপদেষ্টা সংকট নিরসনে একই সাত দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন।