নিউইয়র্কে ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম জিটিও’র মেহদি হাসানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের দুটি মন্তব্য নিয়ে আলোচনা করেছেন সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল। তিনি ড. ইউনূসের বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেছেন, ড. ইউনূস বাঙালির চরিত্র বুঝতে পারেননি।
মাসুদ কামাল 'কথা' নামের নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিওতে এই আলোচনা করেন। ড. ইউনূসের আলোচিত প্রসঙ্গ দুটি হলো— 'নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেছে' এবং 'আওয়ামী লীগের সমর্থক লাখ লাখ হবে না'।
ড. ইউনূসের বক্তব্যের প্রথম অংশ ছিল— নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেছে, কারণ তা না হলে তারা পুরো নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করবে। এই প্রসঙ্গে মাসুদ কামাল বাংলাদেশের ইতিহাস টেনে বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত অংশ না নিয়েও নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছিল এবং সহিংসতা হয়েছিল। তিনি প্রশ্ন তোলেন, নির্বাচন করতে দিলে যদি বাধাগ্রস্ত হয়, তবে নির্বাচন না করতে দিলে কি বাধাগ্রস্ত হবে না?
তিনি আরও বলেন, ইলেকশন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং তারা ড. ইউনূসের সরকারের কাছে জবাবদিহি করে না। তাই নির্বাচন কমিশনের মনোগত কারণ নিয়ে ড. ইউনূসের আলোচনার বিষয়টি তাঁর কাছে স্পষ্ট নয়।
মাসুদ কামালের আলোচনার দ্বিতীয় বিষয়টি ছিল ড. ইউনূসের এই মন্তব্য যে, আওয়ামী লীগের সমর্থক লাখ লাখ হবে না। ড. ইউনূস বলেছেন, তাদের কিছু সমর্থক আছে, তবে কতজন অবশিষ্ট আছে তা তিনি জানেন না। তিনি সমর্থকের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, সমর্থক এমন বিষয় নয় যে ক্ষমতাধরের সামনে মানুষ সবসময় মাথা নত করে। বরং এটা ভয়ের বহিঃপ্রকাশ।
মাসুদ কামাল এই মতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, তাঁর আত্মবিশ্বাস হলো ড. ইউনূসের বাংলাদেশের বাস্তবতা সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগের সমর্থক লাখ লাখ নয়, বরং অনেক বেশি।
মাসুদ কামাল উদাহরণ হিসেবে প্রয়াত সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের জানাজায় হাজার হাজার লোকের উপস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি প্রশ্ন করেন, ক্ষমতা হারানোর পর বা মৃত্যুর পর একজন মানুষ ক্ষমতাধর থাকেন না। তাঁর জানাজায় এত লোক কেন হলো? তাঁরা কি ক্ষমতার ভয়ে গিয়েছিলেন?
তিনি বলেন, বাঙালির চরিত্র হলো তারা ভয়ে কাউকে সমর্থন করে না, বরং ভয়ে চুপ করে থাকে। যেমনটা হাসিনার ক্ষমতায় থাকার সময় দেখা গিয়েছিল। তবে, বাঙালিরা মানুষকে ভালোবাসে, অসহায়কে ভালোবাসে, ভালোবাসে নির্যাতিতকে।
তিনি বলেন, নূরুল মজিদ হুমায়ূন যখন বন্দী ছিলেন এবং মৃত্যুর পরেও তাঁর হাতে হাতকড়া ছিল— এই ঘটনাগুলো মানুষের মনে এক ধরনের সমবেদনা তৈরি করেছে এবং তারই প্রতিফলন তাঁর জানাজায় হাজার হাজার লোকের উপস্থিতি। মাসুদ কামাল মনে করেন, ড. ইউনূসের এই সমর্থনটা কোথা থেকে আসে তা বোঝা দরকার। বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় উন্মুক্ত এবং তারা নির্যাতিত মানুষকে সমর্থন করে, ভালোবাসে।