সমুদ্রগামী বড় জাহাজ আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে, যেখানে আমদানিকারকদের জন্য সাতটি নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে জাহাজের ধারণক্ষমতা, নিবন্ধন, ব্যবহার, এবং কর্মসংস্থান সংক্রান্ত নিয়মাবলী।
এই ভ্যাট অব্যাহতি পেতে হলে, আমদানিকারকদের নিম্নলিখিত শর্তগুলো মেনে চলতে হবে:
১. জাহাজের নিবন্ধন ও আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুসরণ: জাহাজটিকে অবশ্যই বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ হিসেবে নিবন্ধিত হতে হবে এবং ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (IMO) সকল আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনে চলতে হবে, যেগুলোতে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে।
২. জাহাজের বয়সসীমা: আমদানি করা জাহাজের বয়স ২৫ বছরের বেশি হওয়া যাবে না।
৩. নিয়মিত ব্যবহার: আমদানি করা জাহাজ কমপক্ষে তিন বছর বাংলাদেশের পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজ হিসেবে পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত হতে হবে। এই সময়ের আগে কোনো অবস্থাতেই জাহাজটি বিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না। তবে, যদি দৈব-দুর্বিপাক, দুর্ঘটনা, বা ব্যবসায়িক মন্দার কারণে তিন বছরের আগে জাহাজটি বিক্রি বা স্ক্র্যাপ করার প্রয়োজন হয়, তবে আমদানির সময় প্রযোজ্য ভ্যাট পরিশোধের অঙ্গীকারনামা দিতে হবে।
৪. বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন: জাহাজের সমস্ত আয় ও পরিচালনার ব্যয় অবশ্যই বাংলাদেশের তফসিলি ব্যাংকে রক্ষিত ফরেন কারেন্সি (FC) অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। প্রতি বছর অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার প্রমাণস্বরূপ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে ইস্যুকৃত প্রসিড রিয়েলাইজেশন সার্টিফিকেট (PRC) বা প্রত্যয়নপত্র স্থানীয় মূসক কার্যালয়ে জমা দিতে হবে।
৫. পরিবেশ সুরক্ষা: অয়েল ট্যাংকার আমদানির ক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা থেকে সামুদ্রিক দূষণ রোধে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।
৬. বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ: জাহাজে কর্মরত সকল পর্যায়ের কর্মীর কমপক্ষে ৭০ শতাংশ বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি নাগরিকদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
৭. অঙ্গীকারনামা ও আবেদন: আমদানিকারককে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে উল্লেখিত শর্তগুলো মেনে চলার অঙ্গীকারনামা দিতে হবে। একই সাথে, জাহাজের ধারণক্ষমতা, তৈরির দেশ ও সাল উল্লেখ করে এনবিআরে আবেদন করতে হবে এবং সেই আবেদনটি গৃহীত হতে হবে।
এই পদক্ষেপটি দেশীয় শিপিং শিল্পকে আরও শক্তিশালী করতে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।