ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে দীর্ঘদিনের যানজট নিরসনে উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। মহাসড়কের সরাইল বিশ্বরোড এলাকায় ভাঙন অংশ সমতল করতে তিন স্তরে ইট বিছানোর কাজ চলছে। তবে এই উদ্যোগ ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। আগামীকাল মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের এলাকা পরিদর্শনের আগে তড়িঘড়ি করে কাজ শুরু হওয়ায়, তাঁর পরিদর্শন শেষে ইট তুলে ফেলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তাঁদের মতে, এটি সরকারি অর্থের অপচয়। অন্যদিকে সওজ কর্তৃপক্ষ এটিকে 'সংস্কার' নয়, বরং স্থায়ী সমাধানের অংশ হিসেবে জরুরি 'মেরামতকাজ' বলে দাবি করছে এবং ইট সরানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
দীর্ঘদিন ধরে চলা যানজট ও জনদুর্ভোগ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর গত শনিবার সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরাইল বিশ্বরোড অংশে যানজট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ আসে। এর পরপরই সওজ শনিবার বিকেল থেকে সরাইল বিশ্বরোড গোলচত্বর এলাকায় সড়ক মেরামতের কাজ শুরু করে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ঢাকা থেকে ট্রেনে ভৈরবে এসে সড়কপথে সরাইল বিশ্বরোড গোলচত্বরের ভাঙন, যানজট এলাকা এবং চলমান মেরামতকাজ পরিদর্শন করবেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খান সাদাত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এক বছর ধরে মানুষ দুর্ভোগ সহ্য করলেও সওজ বা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের তখন কোনো মাথাব্যথা ছিল না। এখন উপদেষ্টার আগমন উপলক্ষে তড়িঘড়ি সড়ক মেরামত করা হচ্ছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, পরিদর্শন শেষে আবার রাস্তা খুঁড়ে ইট তুলে ফেলা হলে তা অর্থের অপচয় হবে।
বর্তমানে গোলচত্বর অংশে ১২ মিটার প্রস্থ ও ১৮৫ মিটার দৈর্ঘ্য, এবং গোলচত্বর থেকে সিলেটমুখী সরাইল কুট্টাপাড়া খেলার মাঠ পর্যন্ত ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০.৩ মিটার প্রস্থে তিন স্তরে ইট ও বালু বিছানো হচ্ছে। ঢাকা, কুমিল্লা, মুন্সিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে তৈরি প্রায় চার লাখ ইট এখানে ব্যবহার করা হবে। শনিবার বিকেল থেকে রোববার রাত পর্যন্ত গোলচত্বর এলাকায় তিন স্তরে ইট বিছানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
তবে সড়কের মাঝখানে ইট ও বালুর স্তূপ ফেলে রাখায় উল্টো যানজট আরও বেড়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। এতে ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ামুখী যানবাহনগুলো ভোগান্তিতে পড়ছে।
সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জনদুর্ভোগ লাঘবে তাঁরা তিন স্তরের ইট বিছানোর কাজ করছেন। সওজের কুমিল্লা অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু হেনা মোহাম্মদ তারেক ইকবাল আশ্বস্ত করেছেন যে এটি জরুরি ভিত্তিতে শুরু হওয়া কাজ এবং এখান থেকে ইট সরানো হবে না। তিন স্তরের ইট বিছানো হলে যানজট সৃষ্টি হবে না বলেও তিনি মনে করেন।
আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে সরাইল বিশ্বরোড হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫০.৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ আট বছর ধরে ধীরগতিতে চলছে। ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশীয় অর্থ ও ভারতীয় ঋণে চলমান প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় তিন মাস পর ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করলেও কাজের গতি কমে যায়। প্রতিষ্ঠানটির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত মাসের শেষে বাংলাদেশ সরকার অতিরিক্ত ১৬৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়।
প্রকল্প ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ আশা প্রকাশ করেন, এই নতুন বরাদ্দের ফলে আগামী দুই মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সওজের এক কর্মকর্তা জানান, বড় ধরনের এই কাজের জন্য তাঁরা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনার অপেক্ষায় ছিলেন। নির্দেশ পাওয়ার পরই স্থায়ী সমাধানের অংশ হিসেবে কাজে হাত দেওয়া হয়েছে।