রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমানের মতে, একসময় কেবল ইসলামপন্থী রাজনীতিতে পরিচিত জামায়াতে ইসলামী এখন তাদের কৌশল পরিবর্তন করেছে। দলটি এখন শুধু ধর্মীয় পরিচয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বিভিন্ন মতাদর্শের দলগুলোকে নিয়ে একটি বৃহত্তর জোট গঠনের চেষ্টা করছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তারা একদিকে যেমন সরকারের ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়াতে চাইছে, তেমনি বিএনপি সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলোকে নিজেদের শক্তি ও সক্রিয়তা সম্পর্কেও বার্তা দিতে চাচ্ছে।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে অংশ নিয়ে জাহেদ উর রহমান এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে জামায়াত জনগণকে বোঝাতে চাইছে যে তারা আর আগের মতো কট্টর অবস্থানে নেই বরং আরও বেশি গ্রহণযোগ্য ও প্রগতিশীল ভাবমূর্তি তৈরি করতে আগ্রহী।
জাহেদ উর রহমান মনে করেন, জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারকে চাপ দেওয়ার যে কৌশল জামায়াত নিয়েছে, তা মূলত নিজেদের জন্য রাজনৈতিক ময়দান সুবিধাজনক করার একটি চেষ্টা। তার মতে, জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ হলে জামায়াত প্রধান বিরোধী দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পাবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সরাসরি কঠোর অবস্থান না নিয়ে জামায়াত যেভাবে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলছে, তা তাদের সুচিন্তিত রাজনৈতিক কৌশলেরই অংশ।
পিআর (সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) নির্বাচন পদ্ধতির পক্ষে জামায়াতের অবস্থান এবং বিএনপির এই বিষয়ে ভিন্নমত প্রসঙ্গে জাহেদ উর রহমান বলেন, জামায়াতের এই চাপের ফলে খুব বেশি পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না, কারণ বিএনপি এর পক্ষে নেই। তবে জোটের মাধ্যমে তারা নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে চাইছে।
জামায়াত এনসিপি, এবি পার্টি, গণ অধিকার পরিষদ-এর মতো দলগুলোকে সঙ্গে রেখে একটি ইসলামপন্থী জোটের পরিবর্তে একটি বহুমাত্রিক জোট হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে চাইছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো জনগণের কাছে তাদের অতীত অবস্থান থেকে সরে এসে একটি নতুন, আধুনিক রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিতি লাভ করা, যা তাদের নির্বাচনী সফলতা পেতে সহায়ক হবে।
জাহেদ উর রহমানের মতে, জামায়াতের এই কৌশলগত পরিবর্তন বিএনপিকে চাপে ফেলেছে। জামায়াত যদি মধ্যপন্থী রাজনীতিতে আসে, তাহলে বিএনপির অবস্থান কী হবে তা নিয়ে ভোটাররা বিভ্রান্ত হতে পারেন। তিনি মনে করেন, বিএনপিকে তাদের নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান আরও স্পষ্ট করা উচিত।
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এখনকার রাজনৈতিক কার্যক্রমগুলো মূলত চাপ তৈরির অংশ। সেনা শাসনের সম্ভাবনা কম, কারণ বর্তমান সরকার তা চাইছে না। জামায়াতের রাজনীতিতে আসা এই পরিবর্তন, যেখানে নারী প্রার্থীরা হিজাব বা নেকাব ছাড়া প্রচারে অংশ নিচ্ছেন এবং একজন অমুসলিম চাকমা প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে, তা তাদের ভাবমূর্তির এই পরিবর্তনেরই প্রতিফলন।