আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, দেশের বাকস্বাধীনতার প্রতিপক্ষ এখন আর শুধু ফ্যাসিস্ট সরকার বা তার দলের ক্যাডাররা নয়, বরং বিভিন্ন গোষ্ঠীও। তিনি একটি টক শোতে অংশ নিয়ে এ মন্তব্য করেন।
আসিফ নজরুল জানান, গত চার মাসে তার বিরুদ্ধে ১৭টি ভিডিও তৈরি করা হয়েছে, যেখানে ২০০ কোটি টাকার দুর্নীতির মতো অভিযোগও আনা হয়েছে। তিনি বলেন, গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে যত সমালোচনা তাকে শুনতে হয়েছে, তার চেয়ে গত সাত মাসে তার বিরুদ্ধে বেশি কটু কথা বলা হয়েছে। তবে তিনি এসবের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেননি বা কাউকে গ্রেপ্তার করতে বলেননি।
তিনি আরও বলেন, একদল অন্য দলকে 'ধর্মপ্রবণ' বা 'ধর্মীয় উন্মাদ' বলছে, আবার কেউ কেউ অন্যকে 'নাস্তিক' আখ্যা দিচ্ছে। এছাড়া, ভারত-পাকিস্তান-দালাল-শত্রু ইত্যাদি রটনাও চলছে। বিপ্লব-পরবর্তী এই সময়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে, এবং কিছুটা শৃঙ্খলার অভাবও দেখা যাচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আসিফ নজরুল মব জাস্টিস দমনে সরকারের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, 'মব জাস্টিসকে দমন করার জন্য সরকারের যতটুকু কঠোরতা দেখানো দরকার ছিল, তা নিয়ে সমালোচনার অবকাশ আছে।' তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির একটি উথান-পতন হলেও অপরাধ প্রবণতা মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আছে।
তিনি বলেন, যে রক্ত ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে সমাজ গড়ে উঠেছে, সেখানে এই ধরনের পরিস্থিতি গভীর উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে। প্রত্যাশিত মাত্রায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব না হওয়ায় সমাজের অসুস্থতাগুলো আরও তীব্রভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এই ব্যর্থতার পেছনে তিনি কিছু কারণও তুলে ধরেন। আসিফ নজরুল বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজনৈতিকীকরণ একটি বড় সমস্যা। তার মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিকীকরণ হয়েছে পুলিশ বাহিনীর। তিনি অভিযোগ করেন, বিশেষ করে গোপালগঞ্জ ও ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টদের পুলিশে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী সরকারের শাসনামলে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অধিকাংশই ছিলেন আওয়ামী লীগের অনুগত। পরবর্তী সময়ে যারা বঞ্চিত ছিলেন, তাদের বড় পদে বসানো হলেও তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা বা স্বাধীনতা ছিল না। ফলে পুলিশে পেশাদারিত্ব ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ধ্বংসপ্রায় একটি প্রতিষ্ঠানকে সংস্কার ও পরিবর্তন করতে সময় লাগছে, যদিও এ ব্যাপারে প্রচেষ্টা চলছে।