📅 ১ অক্টোবর, ২০২৫ | 🕒 প্রকাশকাল: ১ মাস আগে | অনলাইন ডেস্ক
ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশে ব্যাটারিচালিত রিকশার (ই-রিকশা) সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, যা এখন নগর জীবনে এক বড় সংকটে পরিণত হয়েছে। স্বল্প খরচ এবং সহজে চলাচলের কারণে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে এটি জনপ্রিয় হলেও, এর অনিয়ন্ত্রিত চলাচল, দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং অদক্ষ চালকের কারণে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনা, যানজট এবং পরিবেশগত ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
- দুর্ঘটনা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি: ট্রাফিক পুলিশ জানিয়েছে, বৈধ অনুমোদনের চেয়ে বহু গুণ বেশি ব্যাটারিচালিত রিকশা ঢাকায় চলছে। এদের বেপরোয়া গতি (ঘণ্টায় ৩০-৩৫ কিমি), নিম্নমানের ব্রেকিং সিস্টেম এবং চালকদের লাইসেন্স ও প্রশিক্ষণের অভাব সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির জরিপ অনুযায়ী, শুধু ২০২৪ সালে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান দুর্ঘটনায় ৪৫৭ জন নিহত এবং ১,২০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) জরুরি বিভাগে ভর্তি হওয়া রোগীদের একটি বড় অংশ এই ধরনের দুর্ঘটনার শিকার। বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) গবেষণায় ১৮ ধরনের যানবাহনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশাকে সবচেয়ে বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
- যানজট ও নাগরিক ভোগান্তি: অতিরিক্ত সংখ্যক রিকশার চলাচল ও মূল সড়কে এদের দখলদারির কারণে যানজট বাড়ছে এবং গণপরিবহন ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। পথচারীরাও চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
- বিদ্যুৎ ও পরিবেশগত ক্ষতি: এই রিকশাগুলোয় ব্যবহৃত লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি চার্জের জন্য প্রচুর বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) হিসাব অনুযায়ী, শুধু ঢাকাতেই এই খাতে অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে প্রতিদিন অন্তত ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে, যা লোডশেডিং বৃদ্ধি এবং বৈধ গ্রাহকদের ভোগান্তির কারণ।
- সীসা দূষণ: ব্যবহৃত নিম্নমানের লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি যথাযথভাবে রিসাইক্লিং না করে ফেলে দেওয়ায় মারাত্মক সীসা দূষণ হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সীসাকে মানবদেহের স্নায়ুতন্ত্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে জানিয়েছে।
সরকার এবং ট্রাফিক বিভাগ এই সংকট নিরসনে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন এবং পরীক্ষামূলকভাবে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণকারী সরঞ্জাম ('ট্র্যাপার') স্থাপনের উদ্যোগ নিলেও, চালকরা তা মানছেন না। যদিও ব্যাটারিচালিত রিকশা এখনও সরকারিভাবে বৈধ নয়, এটি লক্ষাধিক বেকার মানুষের জীবিকার উৎস হওয়ায় যেকোনো নিষেধাজ্ঞা বিক্ষোভের মুখে প্রত্যাহার করতে হয়, ফলে এর সংখ্যা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ছে।
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা এই পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন। বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামছুল হক সতর্ক করেছেন যে দ্রুত সমন্বিত নীতি প্রণয়ন না করা হলে ঢাকা শহরের পরিবহন ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়তে পারে এবং বড় ধরনের জননিরাপত্তা সংকট তৈরি হবে। বিশেষজ্ঞরা হঠাৎ নিষেধাজ্ঞা জারি না করে বরং ধাপে ধাপে বিকল্প কর্মসংস্থান, নিরাপদ নকশা, নিবন্ধন ব্যবস্থা এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে চার্জিং স্টেশন ও ব্যাটারি রিসাইক্লিং প্রক্রিয়া চালু করার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা মনে করেন, সুনির্দিষ্ট নীতিমালা, প্রশিক্ষণ ও নিবন্ধনের মাধ্যমেই এই ঝুঁকি মোকাবিলা করা সম্ভব।