বাংলাদেশের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক এবং 'নিরাপদ সড়ক চাই' (নিসচা) আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চন গুরুতর অসুস্থ হয়ে ব্রেন টিউমারে ভুগছেন। তিনি প্রায় সাত মাস ধরে অসুস্থ এবং বর্তমানে গত ছয় মাস ধরে লন্ডনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) নিসচার এক সংবাদ সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে ইলিয়াস কাঞ্চনের ছেলে মিরাজুল মইন তার বাবার অসুস্থতার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মিরাজুল মইন জানান, ইলিয়াস কাঞ্চন গত ২৬ এপ্রিল থেকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান করছেন। এ বছরের শুরুর দিকে তিনি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হন এবং পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ৯ এপ্রিল ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁর মাথার এমআরআই (MRI) করা হয়। রিপোর্টের ফলাফলে তাঁর মাথায় টিউমার ধরা পড়ে।
পূর্বে ইলিয়াস কাঞ্চনের কথা বলতে আটকে যাওয়া এবং অনেক কিছু মনে করতে কষ্ট হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিত, যা এমআরআই রিপোর্টে টিউমারজনিত কারণে হয়েছে বলে জানা যায়। এই রিপোর্ট নিয়ে ১৩ এপ্রিল আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা একটি বোর্ড গঠন করে মত দেন যে, তাঁর মাথায় অস্ত্রোপচার করা অত্যন্ত সংকটপূর্ণ বা ক্রিটিক্যাল হবে। এর কারণ হিসেবে তারা জানান, টিউমারটি মস্তিষ্কের অনেক গভীরে গুরুত্বপূর্ণ নার্ভের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এই মতামতের ভিত্তিতে পারিবারিকভাবে তাকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং তিনি ২৬ এপ্রিল লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন।
লন্ডনে পৌঁছানোর পরদিনই হারলি স্ট্রিট ক্লিনিকে নিউরোসার্জারি ডাক্তারের অধীনে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। দীর্ঘ তিন মাস ধরে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গত ৫ আগস্ট লন্ডনের উইলিংটন হাসপাতালে প্রফেসর ডিমিট্রিয়াসের নেতৃত্বে তাঁর মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়।
অস্ত্রোপচারের পূর্বে ডাক্তাররা পরিবারকে জানান যে, টিউমারটি সম্পূর্ণরূপে অপসারণ করা সম্ভব নয়। পুরোপুরি অপসারণের চেষ্টা করা হলে জীবনহানি কিংবা প্যারালাইজড হয়ে চলন শক্তি ও কথা বলার সক্ষমতা হারানোর ঝুঁকি থাকতে পারে।
ডাক্তারদের এই সিদ্ধান্তের ওপর আস্থা রেখে পরিবার টিউমারটির কিছু অংশ অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচারের অনুমতি দেয়। বাকি অংশ রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপির মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করা হবে বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন।
চিকিৎসার পরবর্তী ধাপে মোট ৩০ দিন রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপি দিতে হবে। এই চিকিৎসা চলবে টানা ৬ সপ্তাহ, প্রতি সপ্তাহে পাঁচ দিন করে। এই মাসেই চিকিৎসার এই ধাপ শুরু হবে। এরপর তিনি আরও চার সপ্তাহ ডাক্তারের পর্যবেক্ষণে থাকবেন। সেখানকার ডাক্তারদের অনুমতি মিললেই তিনি দেশে ফিরতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন তাঁর ছেলে।
নিসচার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিরাজুল মইন তার বাবা নিসচা প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চনের দ্রুত ও সম্পূর্ণ সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে আন্তরিকভাবে দোয়া প্রার্থনা করেছেন।