রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং তাদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে দুটি নতুন প্রকল্প চালু হয়েছে। 'ইনক্লুসিভ সার্ভিসেস অ্যান্ড অপরচুনিটিস ফর হোস্ট কমিউনিটি অ্যান্ড ডিসপ্লেসড রোহিঙ্গা পপুলেশন (আইএসও)' এবং 'হোস্ট অ্যান্ড রোহিঙ্গা এনহ্যান্সমেন্ট অব লাইভস (হেল্প)' নামের এই প্রকল্প দুটিতে মোট ৭০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এই অর্থায়নে বাংলাদেশ সরকার প্রকল্পগুলো মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করবে।
রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই প্রকল্প দুটির উদ্বোধন করা হয়। এতে বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের নতুন ডিভিশন ডিরেক্টর জ্যাঁ পেম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানসহ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য মৌলিক সেবা ও সুযোগ নিশ্চিত করতে পূর্বের অভিজ্ঞতা, বর্তমান চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা করেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পরিচালিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম জটিল একটি উদ্যোগ ছিল। তিনি বলেন, "প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রমাণ করে যে প্রাথমিক সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা হয়েছে। এখন মূল চ্যালেঞ্জ হলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প সম্পন্ন করা এবং এর উদ্দেশ্য অর্জন করা।"
বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের নতুন ডিভিশন ডিরেক্টর জ্যাঁ পেম ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ আট বছরের এই সংকট মোকাবিলায় রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠী উভয়ই অসাধারণ সহনশীলতা দেখিয়েছে। তবে এর ফলে সেবা, অবকাঠামো এবং সামাজিক জীবনে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে, যা প্রশমনে বিশ্বব্যাংক শুরু থেকেই বাংলাদেশের পাশে আছে। জ্যাঁ পেম আরও বলেন, বিশ্বব্যাংকের লক্ষ্য হলো স্বল্পমেয়াদি জরুরি সহায়তার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা। এই প্রচেষ্টায় সরকারি নেতৃত্ব, জাতিসংঘ সংস্থা, এনজিও এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের সমন্বয় অপরিহার্য।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, অর্থসংকটের কারণে তারা দীর্ঘদিন ধরে এই প্রকল্পগুলোর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বলেন, এই সংকটময় পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাংকের এই প্রকল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বব্যাংকের অপারেশনস ম্যানেজার গেইল মার্টিন বলেন, প্রকল্পের বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা এড়িয়ে সময়মতো কাজ শেষ করা জরুরি। সময়মতো কাজ শেষ না হলে ব্যয় বৃদ্ধি পায় এবং অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা কঠিন হয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিশেষ করে স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও রোহিঙ্গাদের জন্য সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
প্রকল্প দুটি গত বছরের মে মাসে সরকারিভাবে পাস হয়েছিল এবং ২০২৮ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং বন বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করবে।