ভাষাসৈনিক, কবি, প্রাবন্ধিক এবং রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ আহমদ রফিক আর নেই।
গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যক্তিত্ব বৃহস্পতিবার (০২ অক্টোবর ২০২৫) রাত ১০টা ১২ মিনিটে ঢাকার বারডেম হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। তাঁর গাড়িচালক মো. রাসেল গণমাধ্যমকে তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসকদের তথ্যমতে, তাঁকে মৃত ঘোষণার সাত মিনিট আগে তাঁর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়।
এর আগে, শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে বুধবার বিকেলে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছিল। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, কিডনির সমস্যায় ভোগার পাশাপাশি সম্প্রতি তিনি কয়েকবার 'মাইল্ড স্ট্রোক'-এর শিকার হন। তিনি বারডেম হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের প্রধান ডা. কানিজ ফাতেমার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
গত ১১ সেপ্টেম্বর ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর তাঁকে পান্থপথের হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তবে সেখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধা না থাকায় গত রোববার তাঁকে বারডেম হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
১৯২৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন এই ভাষাসৈনিক। তিনি নিউ ইস্কাটনের গাউসনগরের একটি ভাড়া বাসায় একাই বসবাস করতেন। ২০০৬ সালে তিনি স্ত্রীকে হারান এবং তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। ব্যক্তিগত সংগ্রহে বিপুল সংখ্যক বই ছাড়া তাঁর অন্য কোনো উল্লেখযোগ্য সম্পদ ছিল না।
ভাষা আন্দোলনের অন্যতম প্রাবন্ধিক ও ইতিহাসবিদ এই লেখক শতাধিক গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনা করেছেন। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য তিনি একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বহু সম্মাননায় ভূষিত হন। দুই বাংলার রবীন্দ্রচর্চায় তাঁর অবদান ছিল অনন্য; কলকাতার টেগর রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে তাঁকে 'রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য' উপাধি প্রদান করা হয়।
২০১৯ সাল থেকে তাঁর দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে শুরু করলে অস্ত্রোপচার করা হয়, কিন্তু ফল আশানুরূপ হয়নি। ২০২৩ সাল থেকে তিনি প্রায় দৃষ্টিহীন ছিলেন। এর আগে, ২০২১ সালে পড়ে গিয়ে পা ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই তাঁর শারীরিক অবস্থার ক্রমাগত অবনতি হচ্ছিল। দেশের বুদ্ধিজীবী মহল তাঁর উন্নত চিকিৎসা এবং রাষ্ট্রীয় সহায়তার দাবি জানিয়েছিলেন।