রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি মন্তব্য করেছেন যে, ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনায় ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। তার মতে, ড. ইউনূসের “ডান-বাম সবকিছু এলোমেলো” হয়ে গেছে এবং উপদেষ্টা পরিষদে পরিবর্তন আনা জরুরি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেও সরকার ব্যর্থ হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একটি ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।
গোলাম মাওলা রনি বলেন, গত এক বছর ধরে যারা ড. ইউনূসকে হেয় করার বা আক্রমণের চেষ্টা করছিলেন, তারা এখন ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন। তাদের কথা, আচরণ ও আক্রমণের মাধ্যমে তারা প্রতিনিয়ত ড. ইউনূস ও তার সঙ্গীদের বিব্রত ও পেরেশান করে তুলছেন।
তিনি আরও বলেন, ড. ইউনূসের ডানদিকে যদি বিএনপি এবং বামদিকে জামায়াতকে ধরা হয়, পেছনের দিকে আওয়ামী লীগ এবং সামনে এনসিপিকে (ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি) ধরা হয়, তাহলে গত তিন মাসে কোনো কিছুই ধারাবাহিকভাবে চলছে না। তিনি বলেন, “আমরা এ পর্যন্ত ড. ইউনূসকে উপলক্ষ করে সরাসরি কিছু বলিনি। আমরা তার কিছু সমালোচনা করেছি, যেমন তার ঋণ মওকুফ করে নেওয়া, গ্রামীণকে সুবিধা দেওয়া, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় নেওয়া ইত্যাদি। কিন্তু তাকে ‘চলে যান’ বা ‘আপনার দ্বারা হবে না’—এমন কথা বলিনি।”
তবে ইদানীং কিছু মহল থেকে ‘নো মোর ইউনূস’ বলে তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হচ্ছে এবং তার বিরুদ্ধে মিছিলের চেষ্টা করা হচ্ছে। রনি মনে করেন, ২০০৭ সালে ১/১১-এর সময় ড. ইউনূস যে প্রত্যাশা নিয়ে এসেছিলেন, ছয়-সাত মাসের মধ্যেই সেই ভাব নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। একইভাবে, বর্তমানেও তার রাজনৈতিক অভিলাষ বন্ধ হয়নি এবং তিনি ‘এনসিপি’ নামে একটি দল গঠনের চেষ্টা করছেন। তার সঙ্গে সেই সময় যারা এসেছিলেন, তাদের অনেকেই রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
গোলাম মাওলা রনি বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, ভবিষ্যতের গতিপথ, এবং নির্বাচন হবে কি হবে না—এসব বুঝতে হলে ড. ইউনূসের চালচলন, কথাবার্তা ও আচরণ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তার মতে, ক্ষমতার চেয়ারের অলৌকিক ঘটনাপ্রবাহ ওই চেয়ারে বসা ব্যক্তির আচার-আচরণেই প্রতিফলিত হয়।
তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসঙ্গে বলেন, ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকেই তার কথাবার্তায় এলোমেলো ভাব দেখা গিয়েছিল। তিনি কখনো অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী, আবার কখনো অতিরিক্ত সন্দেহপ্রবণ হয়ে উঠছিলেন। চীন ও ভারত সফরে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর দেশে ফিরে তিনি বেশামাল হয়ে পড়েন। সংবাদ সম্মেলনে তার ক্রোধ উপচে পড়ে এবং তিনি ‘রাজাকারের বাচ্চাকাচ্চা’ বলে মন্তব্য করেন। এরপর যখন আন্দোলন শুরু হয়, মেট্রোরেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়, তখন মেট্রোরেল দেখতে গিয়ে তার কান্না এবং পরবর্তী কিছু ভিডিও ফুটেজ তার অসহায়ত্ব ফুটিয়ে তোলে। রনি বলেন, “তখনই বোঝা গিয়েছিল যে শেখ হাসিনা ইজ নো মোর (আর নেই)।”
রনি বলেন, ড. ইউনূসের ক্ষমতার স্থায়িত্ব এবং তার অধীনে নির্বাচন হবে কিনা তা বুঝতে হলে তার ডান-বামের অবস্থা দেখতে হবে। তিনি বলেন, “যদি তার ডানে-বামে তাকান... দেখবেন তার ডান-বাম সব এলোমেলো। এনসিপিকে ধরলে দেখবেন গত তিন মাসে কোনো কিছু ঠিক নেই।”
গোলাম মাওলা রনি উপসংহার টানেন যে, যে শক্তি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিচ্ছিল, সেই প্রতিরক্ষা দেয়াল ভেঙে গেছে। এর ফলে ড. ইউনূসের মধ্যে এক অজানা ভয়, শঙ্কা ও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এর ফলস্বরূপ তার কথাবার্তায় এলোমেলো ভাব দেখা যাচ্ছে এবং তার সিদ্ধান্তগুলো কেন্দ্র, সচিবালয়, পুলিশ প্রশাসন, বা ব্যাংক পাড়ায় যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না।