ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান মৌনির সাতৌরি বাংলাদেশের আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের ফলাফল সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত, যা দেশের ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সম্প্রতি ঢাকায় বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাতৌরি এই মন্তব্য করেন। তিনি গণতন্ত্রের জন্য ক্ষমতার পৃথকীকরণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, জনপরিসর এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলোকে অপরিহার্য হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত জরুরি। সাতৌরি আশা প্রকাশ করেন, নির্বাচনের পর ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নবনির্বাচিত সংসদের সঙ্গে কাজ করবে।
মৌনির সাতৌরির নেতৃত্বে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপ-কমিটির একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে বাংলাদেশ সফরে রয়েছে। সাধারণত, বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তনের আগে ইইউ সদস্য নয় এমন দেশগুলোতে এ ধরনের তথ্য-অনুসন্ধান মিশন পাঠানো হয়। সাতৌরি জানান, বাংলাদেশ বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক সন্ধিক্ষণে রয়েছে এবং একই সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সঙ্গে পার্টনারশিপ অ্যান্ড কো-অপারেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (পিসিএ) নিয়ে আলোচনা করছে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, ইইউ যখন কোনো তৃতীয় দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে চায়, তখন মানবাধিকার, আইনের শাসন এবং মৌলিক স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে, কারণ এগুলো যেকোনো ইইউ চুক্তির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে, যা দৃশ্যমান প্রভাব ফেলেছে বলে সাতৌরি উল্লেখ করেন। তবে তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়া এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। তিনি আরও বলেন, গৃহীত সংস্কারগুলো যদি নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয় এবং ব্যাপক সমর্থন পায়, তাহলে এই উত্তরণ প্রক্রিয়া সর্বোত্তম পরিবেশে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
প্রতিনিধিদলটি তাদের সফরকালে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, ট্রেড ইউনিয়ন, নিয়োগকর্তা, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। তারা শিগগিরই অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাংবিধানিক সংস্কার নিয়েও আলোচনা করবে।
সাতৌরি রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশের "অসাধারণ প্রচেষ্টার" প্রশংসা করেন এবং বৈশ্বিকভাবে দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ একা এই বোঝা বহন করতে পারে না। ইইউ এই সংকটে আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি মিয়ানমারে রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে বৈশ্বিক ঐকমত্য গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।
সাতৌরি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরও পরিদর্শন করেন। সফরকালে প্রতিনিধিদলটি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গেও বৈঠক করে।