রংপুরের পীরগাছা স্টেশন এলাকায় যাত্রীবাহী পদ্মরাগ ট্রেনের পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। এ ঘটনায় সান্তাহার-লালমনিরহাট রুটে ট্রেন যোগাযোগ ১১ ঘণ্টা ধরে বন্ধ ছিল, যা পাঁচ শতাধিক যাত্রীর জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়। যাত্রীরা রেললাইনের স্লিপার পচে যাওয়া, পাথরের অভাব এবং দীর্ঘদিন ধরে মেরামতের অভাবকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে দীর্ঘ ১১ ঘণ্টার প্রচেষ্টায় রাত সাড়ে ১১টার দিকে উদ্ধার কাজ সম্পন্ন হয়। উদ্ধার অভিযানে লালমনিরহাট ও পার্বতীপুর থেকে দুটি রিলিফ ট্রেন পাঠানো হয়েছিল। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে ট্রেন চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়েছে বলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, সান্তাহার থেকে লালমনিরহাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা পদ্মরাগ ট্রেনটি পীরগাছা রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায়। এ সময় পঞ্চগড় থেকে সান্তাহারগামী দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস একই স্টেশনে প্রবেশ করায় পদ্মরাগ ট্রেনটি দুই নম্বর লাইনে অবস্থান করে। দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার পর পদ্মরাগ ট্রেনটি লালমনিরহাটের দিকে যাত্রা শুরু করে। এক নম্বর লাইন থেকে দুই নম্বর লাইনে ক্রসিংয়ের সময় হঠাৎ করেই এর পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এই ঘটনায় কোনো বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও রেললাইন ও সিগনালের ক্ষতি হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর অনেক যাত্রী তাদের মালামাল খোয়া যাওয়ার অভিযোগ করেছেন। দুর্ঘটনার সময় ট্রেনে প্রায় পাঁচ শতাধিক যাত্রী ছিলেন। বগি লাইনচ্যুত হওয়ার পরপরই যাত্রীরা আতঙ্কে ট্রেন থেকে নেমে পড়েন এবং বিকল্প যানবাহনে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন।
যাত্রী রফিকুল ইসলাম জানান, হঠাৎ করেই ট্রেনটি থেমে যায় এবং তারা জানতে পারেন বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। এরপর তারা হেঁটে বিকল্প পথে গন্তব্যে যান। প্রত্যক্ষদর্শী আমিরুল ইসলাম মন্তব্য করেন যে ট্রেনটি স্টেশনে থাকার কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। তিনি অবিলম্বে এই রুটের মিটার গেজগুলো পরিবর্তন করে লোহার স্লিপার ও পাথর বসানো এবং পুরো রেলপথকে ব্রডগেজে রূপান্তর করার দাবি জানান।
দুর্ঘটনার পর পরই লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি দুর্ঘটনার মূল কারণ উদঘাটনে কাজ করছে।
দুর্ঘটনার পর বিকেল ৪টার দিকে লালমনিরহাট থেকে একটি উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টার পর একটি বগি উদ্ধার করে কাউনিয়া রেলওয়ে জংশনে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় পার্বতীপুর থেকে দ্বিতীয় একটি উদ্ধারকারী ট্রেন আসে। উদ্ধার কাজের সময় রুহুল আমিন নামের একজন রেলওয়ে কর্মী গুরুতর আহত হলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এই দুর্ঘটনার কারণে সারাদেশের সঙ্গে আন্তঃনগর রংপুর এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, বুড়িমারি এক্সপ্রেস, দোলনচাঁপা, করতোয়া, পদ্মরাগ, রামসাগর এবং কমিউটার ট্রেনের চলাচল বন্ধ ছিল। এর ফলে রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম এবং আংশিকভাবে নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়ের যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ের লালমনিরহাট ডিভিশনের ব্যবস্থাপক আবু হেনা মুস্তফা আলম জানিয়েছেন, লাইন, বগি বা সিগনাল ত্রুটির মতো কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে তদন্ত চলছে। দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি ঘটনাস্থলে কাজ করছে।