“বিদ্রোহী কবির প্রস্থান, চিরকালীন প্রেরণার আলো”
বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্র জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭৬ সালের ২৭ আগস্ট তিনি পরলোকগমন করেন। বিদ্রোহী কবি, গানের স্রষ্টা, অসাম্প্রদায়িক চেতনার অনন্য প্রতীক হিসেবে তিনি আজও সমান প্রাসঙ্গিক। তার প্রয়াণ দিবসে রাজধানীসহ সারাদেশে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে স্মরণ করা হচ্ছে এই মহাকবিকে।
১৮৯৯ সালের ২৫ মে, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নজরুল। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েও তিনি ছোটবেলা থেকেই কবিতা, গান ও অভিনয়ে আগ্রহী ছিলেন। সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় জীবনের নানা অভিজ্ঞতা তার সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে।
তার লেখা কবিতা বিদ্রোহী শুধু সাহিত্য নয়, বাংলার মুক্তিকামী মানুষের জন্য হয়ে ওঠে সংগ্রামের মন্ত্র।
বাংলা গানে নজরুল ছিলেন এক অনন্য প্রতিভা। ইসলামী সংগীত থেকে শুরু করে শ্যামাসঙ্গীত, প্রেমের গান থেকে দেশাত্মবোধক গান—সবক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন সমান সিদ্ধহস্ত। এজন্য তাকে বলা হয় বাংলা গানের স্রষ্টা।
জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের ঐক্যের কথাই নজরুল বলেছিলেন বারবার। তিনি লিখেছিলেন—
“মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান।”
তার এই চেতনা আজও বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মূল ভিত্তি।
দীর্ঘদিন দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগে কবি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার তাকে সপরিবারে ঢাকায় নিয়ে আসে। পরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে জাতীয় কবি ঘোষণা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত।
নজরুল কেবল অতীতের কবি নন, তিনি আজও সমান প্রেরণাদায়ক। তার কবিতা, গান ও দৃষ্টিভঙ্গি তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি এই বিদ্রোহী কবিকে। তার জীবন ও সাহিত্য আমাদের মনে করিয়ে দেয়—
“অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহই সত্যিকার মানবতার পথ।”