বাংলার গ্রামীণ ঐতিহ্য ও লোকজ বিনোদনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম নৌকা বাইচ। দীর্ঘ দেড় বছরের বিরতির পর শুক্রবার (২২ আগস্ট) গাজীপুরের কানাইয়া বাজার নৌ-পরিবহন মালিক সমিতির উদ্যোগে সেই ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হলো। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নৌকার বাঁশি বাজতেই চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের আমেজ।
লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে কানাইয়া বাজার ও আশপাশের নদীপাড় যেন এক মিলনমেলায় রূপ নেয়। নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সবাই ভিড় জমায় নদীর তীরে। রঙিন পোশাকে সেজে আসা দর্শনার্থীরা একে অপরের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন।
এবারের প্রতিযোগিতায় তিন ক্যাটাগরিতে মোট ১৪টি নৌকা অংশ নেয়। ঢাক-ঢোল, করতাল ও শিঙার তালে বৈঠার ছন্দে বৈঠালরা এগিয়ে যেতে থাকে নদীর বুকে। প্রতিযোগিতায় প্রতিটি নৌকা ছিল দর্শকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। বৈঠারীদের স্লোগান আর দর্শকদের উচ্ছ্বাস মিলিয়ে সৃষ্টি হয় এক প্রাণবন্ত পরিবেশ।
প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী নৌকাগুলোর মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন গাজীপুর-২ আসনের এমপি প্রার্থী ও গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুরুল করিম রনি। পুরস্কার প্রদানকালে তিনি বলেন,
“গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখার মাধ্যমে আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। নৌকা বাইচ কেবল খেলা নয়, এটি আমাদের সামাজিক ঐক্য ও সম্প্রীতির প্রতীক।”
মূল প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আগে নৌকা বাইচের নিয়ম-কানুন বর্ণনা শেষে উদ্বোধন করেন আ.ক.ম. মোফাজ্জল হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ৩০ নং ওয়ার্ড সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম মোল্লা, গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি রোহানুজ্জামান শুক্কুর, মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব মোহাম্মদ মাহমুদ হাসান রাজু এবং যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ ফারহাজ বিন ফয়েজ প্রবাল।
দীর্ঘদিন পর আয়োজিত হওয়ায় এ নৌকা বাইচ শুধু প্রতিযোগিতা নয়, বরং ছিল সামাজিক বন্ধনকে দৃঢ় করার একটি উপলক্ষ। নদীপাড়ে বসে ছোট-বড় দোকান, হাট-বাজার, বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে গানে-নাচে মুখরিত ছিল পুরো এলাকা।
নৌকা বাইচের এ আয়োজন যেন গ্রামীণ ঐতিহ্যকে নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিল। দর্শক-শ্রোতাদের প্রত্যাশা, এমন আয়োজন নিয়মিত হোক এবং বাংলার লোকজ সংস্কৃতির ঐতিহ্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে যাক।