লেবার পার্টির জুলাই সমাবেশে নজরুল ইসলাম খান বলেন,
ফ্যাসিবাদ বিদায় করলেও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারিনি
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশ থেকে ফ্যাসিবাদ বিদায় করতে পারলেও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। যারা দেশে লুটপাট গুম-খুন চালিয়েছে, তাদের বিচার দ্রুত সময়ে করা হোক। সে বিচার ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করতে আমরা অনেক আগেই আরেকটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আমরা চাই সুবিচার হোক, কিন্তু বিলম্বিত বিচার নয়।
তিনি আজ (রবিবার) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকীতে বাংলাদেশ লেবার পার্টি আয়োজিত জুলাই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
তিনি বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করার যে চেষ্টা, তার কারণ আছে। কেউ কেউ সংগঠিত হওয়ার জন্য বেশি সময় চাইছেন। আবার কেউ কেউ জোট বাঁধার চেষ্টা করছেন। কিছুদিনে আগেও যারা একে অপরকে বেইমান, বিধর্মী বলে আখ্যায়িত করেছেন, তারা এখন ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এইসব কারণে কি দেশের জনগণ নির্বাচনের যে আকাঙ্ক্ষা, তার জন্য বিলম্ব করবে? আমরা বিশ্বাস করি যে দেশে ইতোমধ্যে নির্বাচন দেওয়ার মতো অবাধ পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সংস্কারও যেমন চলমান প্রক্রিয়া, বিচারও তেমন চলমা প্রক্রিয়া। সংস্কার কমিশনের কাজ- জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন যেটা হলো, সেটারও কাজ প্রায় শেষ। এমনকি জুলাই সনদে যে ড্রাফট আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে, আমরা তাতে বলেছি- কিছু ভাষা প্রয়োগে ত্রুটি, বাক্য গঠনে যে ত্রুটি কিংবা শব্দ আরও সঠিক শব্দ হতে পারে। এছাড়া আর কোনো পরিবর্তনের প্রস্তাব আমরা করি নাই; আমরা একমত হয়েছি। এমনকি সেই সনদে এমন প্রতিশ্রুতির কথাও লেখা আছে, রাজনৈতিক দলগুলো সেখানে স্বাক্ষর করে বলব যে, এই সনদে যা লেখা থাকবে- এটা যেই আমরা নির্বাচিত হই, আমরা সেটা বাস্তবায়ন করব। আমরা রাজি হয়েছি। তাহলে নির্বাচনের বিলম্ব কেন- নির্বাচন কমিশন যদি প্রস্তুত থাকে।
সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, গত ১৫ বছর আমরা গুম-খুন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এক দানবীয় সরকারের মোকাবিলা করেছি। ২৪ জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা একসঙ্গে রাজপথে নেমে এসেছিল ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাত করতে, যেখানে নেতৃত্ব ছিল ছাত্রদের হাতে। আজ আন্দোলনের নেতৃত্ব নিয়ে নানা কথা শোনা গেলেও, নেতৃত্ব কারও চাপে আসে না। এটা অর্জিত হয় কর্মফলের মাধ্যমে। ইউনূস সরকার আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা পালিত হলে জনগণ তাদের ভোটের অধিকার ফিরে পাবে।
সভাপতির বক্তব্যে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ফ্যাসিস্ট আমলে আমাদের দলের নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। গত ২৯ মে আদালত আমাদেরকে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন। সুখবর হলো- নির্বাচন কমিশন আমাদের দল বাংলাদেশ লেবার পার্টিকে নিবন্ধন দিয়েছে এবং আমাদের প্রতীক হচ্ছে আনারস। আগামী সপ্তাহে আমরা নির্বাচন কমিশনে গিয়ে এই প্রতীক গ্রহণ করব, ইনশাল্লাহ। আমরা সরকারকে বলব, নির্বাচন নিয়ে তালবাহানা বন্ধ করে দ্রুত তারিখ ঘোষণা করুন। আমরা বিগত ১৭ বছর গনতান্ত্রিক অধিকার ভোট দেয়ার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। যা জুলাই আন্দোলনের মধ্যমে সফল হয়েছে।
লেবার পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলামের পরিচালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মজিবুর রহমান সরোয়ার, সাবেক ডাকসুর এজিএস নাজিম উদ্দিন আলম, এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট আওরঙ্গজেব বেলাল, লেবার পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট জোহরা খাতুন জুইঁ, মাহবুবুর রহমান খালেদ, মোঃ আলাউদ্দিন আলী, যুগ্ম-মহাসচিব আবদুর রহমান খোকন, মুফতি তরিকুল ইসলাম সাদি, মোঃ হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, খুলনা মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ একেএম সাইফুদ্দোহা, দফতর সম্পাদক মোঃ মিরাজ খান, মহিলা সম্পাদিকা নাসিমা নাজনিন সরকার, মহানগর সদস্য সচিব মোঃ জাহিদুল ইসলাম, যুগ্ম-আহবায়ক মোঃ মাসুদ আলম পাটওয়ারী, মুফতি আরিফ বিন শহিদ, মোঃ ফিরোজ আলম, সদস্য এনামুল হক, আজাদ রহমান, বাংলাদেশ ছাত্রমিশনের সভাপতি সৈয়দ মোঃ মিলন, সাধারন সম্পাদক মোঃ নাজমুল ইসলাম মামুন, সহ-সভাপতি মোঃ সাইফুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক সাকিল হাসনাত, প্রচার সম্পাদক হাফিজুর রহমান রিফাত, মহানগর আহবায়ক রায়হান উদ্দিন সনি প্রমুখ।
এছাড়া সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মঞ্জুর-ই এলাহী, বিপিপির মহাসচিব বিলকিস খন্দকার, গনফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ মধু, আমজনতা দলের দফতর সম্পাদক আরিফ বিল্লাহ প্রমুখ।